বরিসের পদত্যাগে বিপাকে ঋষি সুনাক
যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের আচরণ নিয়ে তদন্ত করছিল আইন প্রণেতাদের একটি দল। সেই তদন্তকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ উল্লেখ করে দেশটির পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেছেন বরিস। একইসঙ্গে যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নীতিরও সমালোচনা করেছেন তিনি।
গত বছর থেকেই পতন হচ্ছিল বরিসের। এর জেরেই প্রধানমন্ত্রীত্ব ত্যাগ করেন তিনি। বিষয়গুলো নিয়ে সুনাককে দায়ী করছেন বরিস। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রিভিলেজেস কমিটি একটি রাজনৈতিক সংঘাতের কাজ করেছে। কমিটির চেয়ারওম্যান, লেবার পার্টির হ্যারিয়েট হারম্যান আমার সঙ্গে পক্ষপাত করেছে।’ ব্লুমবার্গের বরাতে আজ রোববার (১১ জুন) এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।
বরিসের অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি প্রিভিলেজেস কমিটির কোনো সদস্য।
করোনা মহামারির বিধিনিষেধ চলাকালে ডাউন স্ট্রিটে পার্টি করেছিলেন বরিস। এ নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আইন প্রণেতাদের বিভ্রান্তি করছেন কি না তা তদন্ত করে এই প্রিভিলেজেস কমিটি। সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের জেরে গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে বরিস বলেন, ‘কমিটির প্রতিবেদন ভুলে ভরা ও কুসংস্কারে আছন্ন। কিছু মুষ্টিমেয় লোক আমাকে জোর করে পার্লামেন্ট থেকে বের করে দিচ্ছে।’
প্রিভিলেজেস কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে, প্রতিবেদনের তথ্য বরিসকে জানানো হয়েছে।
বরিসের পদত্যাগে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে। বরিসের আসনে পুনরায় ভোট দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে। আর এই আসনেই ২০১৯ সালের নির্বাচনে সাত হাজার ভোটে বিজয়ী হয়েছিল কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতা।
বরিস সরকারে অর্থমন্ত্রী ছিলেন সুনাক। তবে, গত বছর অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন যুক্তরাজ্যের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় থেকে কনজারভেটিভ পার্টির এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধ আরও ফুটিয়ে তুলে। সুনাকের পদত্যাগের কারণেই বরিস প্রধানমন্ত্রীত্ব হারিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
বরিসের পদত্যাগের দিনই ওয়াশিংটনের দুদিনে সফর শেষে দেশে ফিরেন সুনাক। সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা পরিত্যাগ করছে কেন। মন্ত্রীদের ব্যবসা ও ব্যক্তিগত কর কমাতে হবে।’
বরিস বলেন, ‘রক্ষণশীল সরকার হতে আমাদের ভয় পাওয়া উচিত নয়। গত বছর যখন আমি অফিস ছেড়েছিলাম, তখন সরকার নির্বাচনের মাত্র কয়েক পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল। সেই ব্যবধান এখন ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে।’
যুক্তরাজ্যের আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে। তবে, বরিসের পদত্যাগে এই নির্বাচন এগিয়ে চলে আসতে পারে। আগামী গ্রীষ্মেই সুনাকের দলকে বিশেষ নির্বাচনের সম্মুখীন হতে হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ কনজারভেটিভ পার্টিকে অনেকগুলো সমস্যার মধ্যে ফেলেছে। এতে করে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে।
এদিকে, বরিসের পদত্যাগের দিনই অর্থাৎ শুক্রবার তার ঘনিষ্ঠ মিত্র নাদিন ডরিসও বের্ডফোর্ডশিয়ের এমপির আসন থেকে পদত্যাগ করেছে। আর শনিবার নাইজেল অ্যাডামসও পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। বরিসের সম্মানার্থে তারা এমনটি করেছেন বলে জানিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে না লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির জ্যৈষ্ঠ এমপি বিল ক্যাশ। বরিসের বলার পরই তিনি এই ঘোষণা দিয়েছেন। এই তালিকা আরও দীর্ঘ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।