নির্বাচনের পর কম্বোডিয়ায় সহায়তা স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র, ভিসা নিষেধাজ্ঞায় পদক্ষেপ
কম্বোডিয়ার জাতীয় নির্বাচনে জয়ের দাবি করেছে ক্ষমতাসীন পিপলস পার্টি (সিপিপি)। নির্বাচনটি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা করা হলেও তা তোয়াক্কা করছে না প্রায় ৪০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা দেশটির প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। সমালোচকদের দাবি, এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। তবে, আজ সোমবার (২৪ জুলাই) জনসম্মুখে এসে এসব দাবি অস্বীকার করেন হুন সেন। এই প্রধানমন্ত্রীর দাবি, অর্থবহ বিরোধীদের হারিয়েছেন তিনি। এদিকে, এই নির্বাচনকে অবাধ বা সুষ্ঠু নয় আখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করেছে এমন ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু বিদেশি সহায়তাও স্থগিত করেছে দেশটি। এএফপি ও যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, প্রকৃত রাজনৈতিক বিরোধী, বাকস্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দমিয়ে রেখে ক্ষমতায় রয়েছেন হুন সেন। তবে, কিছু দিন আগে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ওই সময় হুন সেন জানিয়েছিলেন, তিনি তার বড় ছেলে ও সেনাপ্রধান হুন মানেটের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
এদিকে, কার্যত বিরোধীদল ছাড়া কম্বোডিয়ার নির্বাচনকে প্রত্যাখান করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি নির্বাচনের জেরে দেশটির বেশ কয়েকজনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশটি। একইসঙ্গে দেশটিতে চলমান সহায়তা বন্ধ করেছে তারা।
কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হুন মানেট সিপিপির বিজয়কে স্বাগত জানিয়ে একাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। এক পোস্টে কম্বোডিয়ার সেনাপ্রধান লেখেন, ‘কম্বোডিয়ানরা ভোটের মাধ্যমে তাদের মতপ্রকাশ করেছে। অপ্রতিরোধ্য সিপিপির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে তারা।’ পাশাপাশি জনগণকে ধন্যভাদ জানিয়ে হুন মানেট লেখেন, ‘ভালোবাসা ও আস্থার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।’
গতকাল ২৩ জুলাই কম্বোডিয়ার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলে বেলা ৩টা পর্যন্ত। এই নির্বাচনের ফলাফল এখনও ঘোষণা করেনি দেশটির জাতীয় নির্বাচন কমিটি (এনইসি)। ফলাফল পেতে সপ্তাহখানেকের মতো সময় লাগবে। তবে, সিপিপি দাবি করছে, তারা বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা সিপিপি এবং ১৭টি ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তবে, কয়েক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা হুন সেনকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে এমন কোনো ‘কার্যকর’ জনপ্রিয় দল নেই দেশটিতে। হুন সেনের দল পার্লামেন্টের সবগুলো আসন (১২৫টি) ধরে রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিপিপির সঙ্গে জোট করা প্রিন্স নোরোদম চাকরাবুথের দল ফানসিনপেক পার্টিকে পার্লামেন্টে পাঁচটি আসন দেওয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই নির্বাচনে সিপিপিকে টক্কর দিতে পারতো দেশটির প্রধান বিরোধী দল দ্য ক্যান্ডেল লাইট পার্টি। তবে, গত মে মাসে নিবন্ধন হারায় রাজনৈতিক দলটি। এর ফলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি তারা। কম্বোডিয়ার গণতন্ত্রকে চাপে ফেলার জন্য হুন সেন এমনটি করেছেন বলে অভিযোগ সমালোচকদের। কার্যত প্রধান বিরোধীদল ছাড়া নির্বাচনে হুন সেনের সিপিপি বিজয়ী হবে তা অনুমেয়।
এই নির্বাচনকে অবাধ বা সুষ্ঠু নয় আখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, নির্বাচনের আগে, কম্বোডিয়ার ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক বিরোধী, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের বিরুদ্ধে হুমকি এবং হয়রানির একটি প্যাটার্নে নিযুক্ত ছিল, যা দেশটির সংবিধান ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে ক্ষুণ্ন করেছে। এই পদক্ষেপগুলো কম্বোডিয়ার জনগণকে তাদের দেশের ভবিষ্যত নির্ধারণের পথ রোধ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করেছে এমন ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু বিদেশি সহায়তাও স্থগিত করেছে দেশটি।
এদিকে, কম্বোডিয়ার নির্বাচনকে সফল বলে জানিয়েছে চীন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সফল নির্বাচনে জয়ের জন্য হুন সেনকে অভিনন্দর জানিয়েছে। পাশাপাশি সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার ইঙ্গিত দিয়েছে।
প্রতিবেদনে এএফপি জানিয়েছে, কম্বোডিয়ার বিরোধীরা চুপ রয়েছেন। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে সরকার বাছাইয়ের সুযোগ থাকলেও তারা তা করছে না। তবে, কার্যত কোনো বিরোধী দল নির্বাচনে নেই। যদিও ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যালট পেপার বাতিল করা অসন্তোষ দেখানোর একটি উপায় ছিল তাদের হাতে।
ব্যালট পেপার নষ্টের অভিযোগে ২৭ কম্বোডিয়ানের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খেউ সোপহেক এ তথ্য জানিয়েছেন।