ফুকুশিমার পানি সাগরে ফেলার বিরোধীতায় জাপানের জেলে ও স্থানীয়রা
সুনামিতে বিধ্বস্ত ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শোধিত তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়ছে জাপান। তবে, এর বিরোধীতা করছে দেশটির জেলে ও স্থানীয়রা। তারা শোধিত তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলানো বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি মামলা করার কথা জানিয়েছে তারা। খবর এএফপির।
প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানিয়েছে, ফুকুশিমার কাছে বসবাসকারী প্রায় ১০০ জেলে ও স্থানীয়রা তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলানো বন্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছে। চলতি সপ্তাহেই এই মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে তারা।
২০১১ সালের মার্চে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় টোকিওর ফুকুশিমা-দাইছি বিদ্যুৎকেন্দ্র। ওই প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণ হারান ১৮ হাজার মানুষের। এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্ত চুল্লিকে শীতল রাখার জন্য ওই পানি ব্যবহার করা হয়। হিসেব অনুযায়ী, চুল্লি শীতল করতে ব্যবহৃত হওয়া ১৩ লাখ ৪০ হাজার টন তেজস্ক্রিয় পানি সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা দিয়ে ৫০০টিরও বেশি অলিম্পিক গেমসের সুইমিং পুল ভরে ফেলা সম্ভব।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শীতল রাখতে ব্যবহৃত পানি গত ২৪ আগস্ট থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলছে জাপান। আগে থেকেই এর বিরোধীতা করা জেলেরা ভীত। এতে করে তাদের শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে বলে শঙ্কা তাদের।
বিরোধীতাকারী ফুকুশিমার জেলে ও স্থানীয় সংগঠনের সদস্য সুগি তানজি এএফপিকে বলেন, ‘আমরা ফুকুশিমা ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে আগামী শুক্রবার একটি মামলা করব। তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সরকার জেলে ও স্থানীয়দের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা তা ভঙ্গ করছে।’
এই অধিকারকর্মী আরও বলেন, ‘সাগরে ছেড়ে দেওয়া কখনই সহ্য করা যায় না, কারণ এটি পারমাণবিক দুর্ঘটনার শিকারদের আরও দুর্ভোগ নিয়ে আসবে।’
সাগরে ফেলা পানি দূষিত বা তেজস্ক্রিয় নয়, এমনটা অনেক আগে থেকেই আশ্বস্ত করে আসছে জাপান সরকার। এই পানির জন্য মানুষের স্বাস্থ্যে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়ে আসছে তারা। গত সপ্তাহে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা যুক্তরাষ্ট্রের দূত রাহম এমানুয়েলকে নিয়ে ফুকুশিমার মাছ খান, যা সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে প্রকাশ করা হয়।
এদিকে, পানি সাগরে ফেলানোয় জাপান থেকে সামুদ্রিক পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন। বিষয়টি নিয়ে চীনে থাকা জাপানের কনস্যুলার কার্যালয়েও হামলা চালানো হয়। পাশাপাশি উদ্বেগ জানিয়েছে জাপানের আরেক প্রতিবেশী ও মিত্র দক্ষিণ কোরিয়াও।
গত জুলাইয়ে তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ফেলার অনুমতি দেয় আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। ওই সময় সংস্থাটি থেকে বলা হয়, জাপান ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লির তেজস্ক্রিয় পানি সাগরে ছাড়ার যে পরিকল্পনা করেছে, তা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার মানদণ্ড অনুযায়ী করা হয়েছে। এতে মানুষ ও পরিবেশের ওপর তেমন ক্ষতিকর কোনো প্রভাব পড়বে না। একই কথা এখনও বলে আসছে জাপান সরকার।