নাগোরনো-কারাবাখে সংঘাত : ছিটমহল ছেড়ে পালাচ্ছে হাজারও আর্মেনিয়ান
জাতিগত নির্মূলের আশঙ্কা থেকে নাগোরনো-কারাবাখ ছেড়ে পালাচ্ছে হাজার হাজার আর্মেনিয়ান নাগরিক। গত সপ্তাহে আজারবাইজান বিরোধপূর্ণ এলাকা দখল করে নেওয়ার পর ছিটমহলটি থেকে তিন হাজারেরও বেশি শরণার্থী সীমান্ত অতিক্রম করে আর্মেনিয়ায় পৌঁছেছে। ছিটমহলের এক লাখ ২০ হাজার অধিবাসীর সিংহভাগই আর্মেনিয়ান। খবর বিবিসির।
আর্মেনিয়া সরকার সম্প্রতি এক ঘোষণায় জানায় যে, সংঘাতের কারণে বাড়িঘর ছাড়া এসব লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে তারা। নাগোরনো-কারাবাখের অধিবাসীরা জাতিগত নির্মূলের হুমুকর মুখে রয়েছে বলেও জানায় ইয়েরেভান (আর্মেনিয়ার রাজধানী)।
তবে, আজারবাইজান জানিয়েছে, ছিটমহলে বসবাসকারী আর্মেনিয়ানদের সমান নাগরিক হিসেবে পুনরায় সংহত করতে চায় তারা।
গতকাল রোববার আর্মেনিয়া ও কারাবাখের সীমান্তে গোরিস শহরে পালিয়ে আসা কিছু শরণার্থীদের সঙ্গে কথা হয় বিবিসির। একজন পুরুষ জানান, ‘আমি আমার জন্মভূমির জন্য সারাটি জীবন দিয়েছি। এই অবস্থার চাইতে আমাকে তারা মেরে ফেলতো সেটাই ভালো হতো।’
ভেরোনিকা নামের এক নারী জানান, এই নিয়ে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো শরণার্থী হলেন। প্রথমবার হয়েছিলেন ২০২০ সালে।
কোরনিডজোর গ্রামের পার্শ্ববর্তী এলাকার কিছু শরণার্থী জানান, তারা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে আজারবাইজানের শাসনাধীনে নিরাপদে থাকবেন। তা ছাড়া তারা বাড়িও ফিরে যেতে পারবেন না।
রোববার আর্মেনিয়া সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, শত শত শরণার্থীকে ইতোমধ্যে সরকারি তহবিলের বাড়ি দেওয়া হয়েছে। তবে, কীভাবে এই জনস্রোত মোকাবিলা করা হবে তা বলা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাসিনিয়ান এক ঘোষণায় গত সপ্তাহে বলেন ৪০ হাজার শরণার্থীকে দেখাশোনার পরিকল্পনা করছেন তারা।
এদিকে, আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরেভানে আজ সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সরকার বিরোধী বিক্ষোভে জড়িত ১৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম এ তথ্য জানায়। অন্যদিকে, বার্তা সংস্থা তাস জানায় ইয়েরেভানে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করা লোকজনকে আটকের কাজ শুরু করেছে বিশেষ বাহিনী। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অফিসসহ সরকারি অফিসগুলোর বাইরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পাসিনিয়ানের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা নাগোরনো-কারাবাখ প্রসঙ্গে আজারবাইজানকে অতিরিক্ত ছাড় দেওয়ার অভিযোগ আনে ও তার পদত্যাগ দাবি করে। আর্মেনিয়া অভিযোগ করে আসছে যে, আজারবাইজান কর্তৃপক্ষের ভুলের কারণে শরণার্থীর এই স্রোত সৃষ্টি হয়েছে।
নাগোরনো-কারাবাখ হলো দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকা যা কিনা আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হিসেবে স্বীকৃত, তবে যুগ যুগ ধরে জাতিগত আর্মেনিয়ানরা এলাকাটিকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এই ছিটমহলটির অধিবাসীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছে আর্মেনিয়া। পাশাপাশি তাদের সহায়তা করছে রাশিয়া। গত কয়েক বছর ধরে সেখানে শত শত রুশ সৈন্য অবস্থান করে আসছে।
গত সপ্তাহে আজারবাইজান সেনাবাহিনীর অভিযানে পাঁচজন রুশ শান্তিরক্ষীসহ কমপক্ষে ২০০ জাতিগত আর্মেনিয়ান ও কয়েক ডজন আজারবাইজানি সৈন্য নিহত হয়।