ইসরায়েলে মার্কিনিদের ভ্রমণ সতর্কতা জারি
ইরানের হামলার আশঙ্কায় ইসরায়েলে মার্কিন নাগরিকদের ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন দূতাবাস বলেছে, ‘অধিকতর সতর্কতা হিসেবে কর্মীদের বৃহত্তর জেরুজালেম, তেল আবিব ও বেরশেবা এলাকার বাইরে ভ্রমণ না করতে বলা হয়েছে।’ খবর বিবিসির।
১১ দিন আগে সিরিয়ায় নিজেদের কনস্যুলেট ভবনে হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খোমেনি। ওই হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের দুজন জেনারেলসহ ১৩ জন নিহত হয়।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরন টেলিফোনে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ানকে উত্তেজনা আরও না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলি হামলায় সাত কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে জানায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডস। এলিট কুদস বাহিনীটির সিনিয়র কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি ও তার সহকারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি-রহিমি নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।
ইসরায়েল কনস্যুলেটে হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে এর পেছনে দেশটি রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিরিয়ায় ইরানের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্যবস্তুতে শত শত হামলা চালানোর কথা অবশ্য স্বীকার করে ইসরায়েলি বাহিনী। সশস্ত্র এসব গোষ্ঠীকে বিপ্লবী গার্ড অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ দেয় বলে অভিযোগ ইসরায়েলের। গত বছরের অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হিজবুল্লাহ এবং লেবানন ও সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত অন্যান্য গোষ্ঠীগুলোর আন্তঃসীমান্ত হামলার প্রতিক্রিয়ায় উত্তর ইসরায়েল পাল্টা হামলা জোরদার করেছে।
গাজায় হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চলার একপর্যায়ে গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসের পাশে কনস্যুলেট ভবনে হামলা চালানো হয়। গত বুধবার (১০ এপ্রিল) মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে বলেছেন, ইরান ‘বড় ধরনের আক্রমণ’ শুরু করার হুমকি দিচ্ছে। তিনি ইসরায়েলকে লৌহশক্ত সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, দেশকে রক্ষা করার জন্য তারা প্রস্তুত। কেউ যদি আমাদের ক্ষতি করতে চায়, তাহলে আমরাও দেশের স্বার্থে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি।’
মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার এরিক কুরিলা নিরাপত্তার হুমকি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইসরায়েল গেছেন। পেন্টাগন বলেছে, তার সফরটি পূর্বে নির্ধারিত ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারণে তা এগিয়ে আনা হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপের পর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ক্যামেরন বলেন, তিনি স্পষ্ট করেছেন, ইরান যেন মধ্যপ্রাচ্যকে বৃহত্তর সংঘাতের দিকে টেনে না নেয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চীন, সৌদি আরব ও তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং তিনি যুক্তি দিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে আরও উত্তেজনা বৃদ্ধিতে কারও স্বার্থ নেই।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে বলেন, ‘ইসরায়েলি ভূখণ্ডে সরাসরি ইরানি যেকোনো আক্রমণ হলে দেশটির বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন হবে।’
বৃহস্পতিবার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘আমি এ সিদ্ধান্তের পেছনের সুনির্দিষ্ট মূল্যায়ন প্রকাশ করব না। এটি পরিষ্কার, আমরা মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে ইসরায়েলে হুমকিমূলক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর ইসরায়েলে তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা হালনাগাদ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাজ্য সরকার ইরান থেকে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে আক্রমণের আশঙ্কা তুলে ধরেছে এবং এই ধরনের আক্রমণ আরও ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।’ গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বে হামলার পর যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর ইসরায়েলের বড় অংশ এবং অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলে নাগরিকদের ভ্রমণ না করতে সতর্ক করেছে।
জার্মানির বিমানসংস্থা লুফৎহানসা জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থার কথা মাথায় রেখে শনিবার পর্যন্ত তারা তেহরানে বিমান চালাবে না।
গত ৭ অক্টোবর হামাস হামলা করে প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে। এখনও তাদের হাতে ১৩০ জন জিম্মি রয়েছে এবং ৩৪ জিম্মির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি ইসরায়েলের। ইসরায়েল গাজায় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে, যা এখনও চলছে। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৩ হাজার ৫৪৫ জন নিহত এবং ৭৬ হাজার ৯৪ জন আহত হয়েছে।