ইসরায়েলে নজিরবিহীন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের
ইসরায়েলি ভূখণ্ডে নজিরবিহীন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। শনিবার (১৩ এপ্রিল) শেষরাতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এর ফলে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা পরোক্ষ যুদ্ধ প্রকাশ্যে রূপ নিল। পাশাপাশি পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক শত্রুতার রেশ আরও বৃহৎ আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বাস্তবে পরিণত হলো। খবর এএফপির।
আজ রোববার (১৪ এপ্রিল) ভোর থেকেই ইরানের মিত্র ও পরোক্ষ যুদ্ধের সহযোগীরা ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়। হামলার কারণে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে নাগরিকদের সতর্ক করতে সাইরেন বেজে ওঠে। জেরুজালেমের আকাশে শোনা যায় বিস্ফোরণের শব্দ।
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলের বিমান হামলার পর থেকেই উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলে হামলার বিষয়ে হুমকি দিয়ে আসছিল ইরান। এরপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে আসছিল, এর প্রতিশোধ নিতে ইরান পাল্টা হামলা চালাতে পারে।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘ইরান তার ভূখণ্ড থেকে আনম্যান্ড এরিয়াল ভেহিকেলের (ইউএভি-ড্রোন) মাধ্যমে স্টেট অব ইসরায়েলে আক্রমণ করেছে। আমরা আমাদের মিত্র ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার বিষয়ে এবং হামলা প্রতিহত করতে কাজ করে যাচ্ছি।’
এদিকে, নতুন করে তৈরি হওয়া এই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলে পক্ষে তার ‘লৌহকঠিন’ সমর্থনের বিষয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এবং তার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন।
অন্যদিকে, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, দামেস্কে ইসরায়েলের হামলার কারণেই প্রতিশোধ নিতে এই হামলা চালানো হয়েছে। ওই হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সাত সদস্য নিহত হয়, যাদের মধ্যে দুজন জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তাও ছিলেন। বিপ্লবী গার্ড জানায়, ড্রোন হামলা চালানোর এক ঘণ্টা পর ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চালানো হয়।
হামলার পর শত শত ইরানি নাগরিক রাজধানী তেহরানের প্যালেস্টাইন স্কয়ারে ইরান ও ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে নজিরবিহীন এই সামিরক পদক্ষেপের বিষয়ে তাদের সমর্থন প্রকাশ করে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরান ২০০ ড্রোনের পাশাপাশি ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। এ বিষয়ে ড্যানিয়েল হাগারি জানান, ইসরায়েল বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্রকে মাটিতে নামিয়ে আনতে পেরেছে। এ ছাড়া আকাশপথের হুমকি ঠেকাতে কয়েক ডজন যুদ্ধবিমানকেও কাজে লাগানো হয়েছে।
ইরানের মিত্ররাও এই হামলায় অংশ নিয়েছে। ইয়েমেনের হুতিরা ইসরায়েলে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি লেবানন থেকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি অবস্থানে রকেট হামলা চালিয়েছে।
হামলায় নেজেভ মরুভূমিতে থাকা ইসরায়েলি বিমান ঘাঁটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানি বার্তা সংস্থা ইরনা। তবে ইসরায়েল বলেছে, এই হামলায় ঘাঁটির সামান্য ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলে ইরানের হামলার কারণে গাজা যুদ্ধবিরতির আলোচনায় নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এক হাজার ১৭০ জনকে হত্যা করে ও বেশ কিছু ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে জিম্মি করে গাজা উপত্যকায় নিয়ে আসে।
এরপর ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৬৮৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নিরীহ শিশু ও নারী। শনিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা গাজা উপত্যকায় হামাসের ৩০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। হামলায় দেইর আল-বালাহ শহরের একটি মসজিদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।