লেবাননে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ বিরুদ্ধে বিশ্বনেতাদের হুঁশিয়ারি
লেবাননে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধে’ জড়িয়ে পড়া থেকে ইসরায়েলকে বিরত রাখতে জাতিসংঘে একজোট হয়েছেন বিশ্বনেতারা। গতকাল মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি ‘খাদের কিনারায়’ রয়েছে উল্লেখ করে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। খবর এএফপির।
আন্তর্জাতিক কূটনীতির সর্বোচ্চ প্রান্তে অবস্থানকারী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। লেবাননের সরকারি কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় সেখানে ৫৫৮ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে ৫০ জন শিশু। যুদ্ধপূর্ণ এই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটেই বিশ্বনেতারা জাতিসংঘে এই যুদ্ধ যাতে আরও বিস্তৃত না হয় সে লক্ষ্যে তাদের বক্তব্য তুলে ধরছেন।
জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে দেওয়া তার বিদায়ী বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘সর্বাত্মক যুদ্ধ কারও স্বার্থেই হতে পারে না। যদিও পরিস্থিতি বেশ অবনতির দিকে, কিন্তু আমি মনে করি এখনও কূটনৈতিক উপায়ে এর একটি সমাধান সম্ভব।’
আজ বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি অধিবেশনকে সামনে রেখে বাইডেন বলেন, ‘লেবানন ও ইসরায়েল দুই দেশের সীমান্তে অবস্থানকারী বাসিন্দাদের নিরাপদে তাদের ঘরবাড়িতে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি অনুমোদন দেওয়াই এখন দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তা প্রদানের একমাত্র পথ।’
এদিকে লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বো হাবিব প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এরকম মন্তব্যের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, তার বক্তব্যে লেবাননের বিষয়টিতে সমাধানের কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, ইসরায়েলি হামলায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
অন্যদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস অধিবেশনের শুরুতে দেওয়া তার বক্তব্যে বলেন, ‘লেবানন পরিস্থিতির অবনতিতে আমাদের সবাইকে সতর্ক হতে হবে। লেবানন খাদের কিনারায় রয়েছে।’
তবে জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেছেন, তারা লেবাননে স্থল অভিযানের ব্যাপারে আগ্রহী নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না, আমাদের ছেলেরা বিদেশে গিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ুক।’
তবে এখনও এ বিষয়টি পরিষ্কার নয়, ২০২৩ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের গাজা উপত্যকায় চলতে থাকা ইসরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণ ও স্থল অভিযান থামাতে কোনো যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাবে কি না কিংবা লেবাননে উত্তেজনা কমাতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না।
গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আবারও ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে বিশ্বনেতাদের উদ্যোগী হতে বলেছেন।
এদিকে, এই যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি জন্য ইসরায়েলকে দোষারোপ করেছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান পুরো অঞ্চলকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে বলেছেন, ‘গাজায় কেবল শিশুরাই মারা যাচ্ছে না, জাতিসংঘের নেওয়া ব্যবস্থাও মারা যাচ্ছে।’
জাতিসংঘের মহাসচিব তার বক্তব্যে লেবানন পরিস্থিতি আরেকটি গাজা যুদ্ধের দিকে মোড় নিচ্ছে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল বলেছেন, ইসরায়েলের অবশ্যই নিজেকে রক্ষায় অধিকার রয়েছে, তবে তা কখনোই তার সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে বেসামরিক লোকজনের ওপর শাস্তি প্রয়োগের মাধ্যমে নয়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিবেকহীন ও বোধগম্য নয়, এমন অকার্যকর তৎপরতার জন্য জাতিসংঘের সমালোচনা করেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি লেবাননে সংঘাত ক্রমশ বাড়তে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ক্রমশ বাড়তে থাকা এই সংঘাত একটি বড় ধরনের আঞ্চলিক বিরোধ তৈরি করতে পারে।’