‘পাকিস্তানে ট্রেনে সন্ত্রাসবাদের মূল পৃষ্ঠপোষক ভারত’

পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, ভারতই বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসবাদের মূল পৃষ্ঠপোষক। আজ শুক্রবার (১৪ মার্চ) তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় তিনি জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলার বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন। খবর ডনের।
এর আগে, মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুরে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) সন্ত্রাসীরা কোয়েটা-পেশোয়ারগামী ট্রেনটিতে হামলা চালায়। এ সময় ট্রেনটিতে ৪৪০ জন যাত্রী ছিলেন। সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে। নিরাপত্তা বাহিনী দুই দিন ধরে অভিযান পরিচালনা করে এবং বুধবার সন্ধ্যায় অভিযান শেষ হয়।
ডিজি আইএসপিআর নিশ্চিত করেছেন, অভিযানে ৩৩ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। এ ছাড়া ২১ জন যাত্রী এবং চারজন ফ্রন্টিয়ার কর্পস (এফসি) সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। তবে চূড়ান্ত উদ্ধার অভিযানে কোনো জিম্মির ক্ষতি হয়নি।
আজ এক সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী বলেন, হামলাকারীরা পরিকল্পিতভাবে দুর্গম স্থান বেছে নিয়েছিল, যেখানে মোবাইল টেলিফোন সংযোগও ছিল না।
আইএসপিআর মহাপরিচালক জানান, হামলার আগে সন্ত্রাসীরা এফসি’র একটি চৌকিতে হামলা চালিয়ে তিনজন সেনাকে শহীদ করে। পরে তারা ট্রেনে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেটিকে অচল করে দেয় এবং যাত্রীদের জিম্মি করে। তিনি আরও জানান, কিছু যাত্রীকে ট্রেনের ভেতরে রাখা হয়েছিল, বাকিদের তিনটি গ্রুপে ভাগ করে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী বলেন, “একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর যাত্রীদের ছেড়ে দেওয়া হয়, যা ছিল একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।”
আইএসপিআরের ডিজি জানান, সন্ত্রাসীরা ভারত ও আফগানিস্তানের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, যা পূর্ববর্তী হামলাগুলোতেও দেখা গেছে। তিনি বলেন, “আমাদের বুঝতে হবে, এই হামলার পেছনে এবং আগের ঘটনাগুলোতে ভারতই প্রধান পৃষ্ঠপোষক,” বলেন ।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভারত বেলুচিস্তানকে অস্থিতিশীল করার নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে, যার প্রমাণ বিভিন্ন ভারতীয় কর্মকর্তাদের বক্তব্য ও প্রচারিত ভিডিওচিত্র।
ডিজি আইএসপিআর ভারতীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে কড়া সমালোচনা করে বলেন, “ভারতীয় মিডিয়া ভুয়া ভিডিও ও এআই-জেনারেটেড ছবি ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে।” তিনি দাবি করেন, ভারতীয় মিডিয়া সন্ত্রাসীদের বৈধতা দেওয়ার জন্য অপপ্রচার চালিয়েছে এবং এটিকে তিনি ‘তথ্যযুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেন।
ডিজি আইএসপিআর জানান, ২০২৪ সালে পাকিস্তানে ৫৯ হাজার ৭৭৫টি গোয়েন্দাভিত্তিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে এবং ২০২৫ সালের শুরু থেকেই ১১ হাজার ৬৫৪টি অভিযান চালানো হয়েছে। তিনি জানান, “এই বছর গড়ে প্রতিদিন ১৮০টি গোয়েন্দাভিত্তিক অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৫০ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে, আর শহীদ হয়েছেন ৫৬৩ জন নিরাপত্তা কর্মী।

বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি বলেন, “পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাভিত্তিক যুদ্ধ চালানো হচ্ছে, যেখানে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ আফগান মাটিকে ব্যবহার করছে।”
তিনি সন্ত্রাসীদের ‘খাঁটি দুষ্ট শক্তি’ বলে অভিহিত করে বলেন, “তাদেরকে কেবল সন্ত্রাসী বলাই যথেষ্ট, অন্য কোনো নামে ডাকার প্রয়োজন নেই।”
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) কোয়েটায় উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রীরা এবং সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে এক প্রেস কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান এবং বলেন, “রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সামরিক বাহিনীর একসঙ্গে বসে দেশের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা উচিত।”
এদিকে, জাতীয় পরিষদের এক অধিবেশনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ হামলাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানানোর জন্য পিটিআইয়ের কড়া সমালোচনা করেন।