ভূমিকম্পে মিয়ানমারে নিহত ৩ হাজার ছুঁইছুঁই, উদ্ধার করা হচ্ছে জীবিতদের

গৃহযুদ্ধের কারণে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারের মানবিক সংকট বহু পুরোনো। এর মধ্যেই গত শুক্রবার (২৮ মার্চ) আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্প সেই সংকটকে আরও ভয়াবহ মাত্রায় নিয়ে গেছে। সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সময় যত গড়াচ্ছে, এই সংখ্যাটা ততোই বাড়ছে। কোথায় গিয়ে তা ঠেকবে, তা এখনো বলা যাচ্ছে না।
তবে আশার কথা, এখনো উদ্ধার করা হচ্ছে জীবিতদের। উদ্ধার কাজে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় অনেককে খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। খবর বিবিসির।
এদিকে পঞ্চম দিনের মতো চলমান উদ্ধার কার্যক্রমে ধ্বংসস্তূপ থেকে ৬৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। তবে তার মতো আরও অনেকের জীবিত ফিরে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে।
রাজধানী নেপিডোর উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ভবন ধসে পড়ার পর ইট-পাথরের স্তূপের নিচে ঢাকা পড়েছিলেন ওই নারী। কিন্তু তাকে সফলভাবে তুলে আনা সম্ভব হয়েছে।
শুক্রবার দিনের মাঝামাঝিতে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে আঘাত হানে ভূমিকম্প। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময় যত পেরিয়ে যাচ্ছে জীবিতদের উদ্ধারের সম্ভাবনা ততোই কমে যাচ্ছে।
দেশটির রাজধানী নেপিডোর একটি ফোরামে জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৭১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন চার হাজার ৫২১ জন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৪৪১ জন।’
মিয়ানমারের বিভিন্ন অংশ থেকে অনুভূত হয়েছে এই বিধ্বংসী ভূমিকম্প। এতে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। সড়ক ও সেতু ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে একদিকে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
বেশিরভাগ প্রাণহানি হয়েছে মান্দালয় ও নেপিডোতে। ইউনিসেফের মিয়ানমার প্রতিনিধি জুলিয়া রিস বলেন, ‘এখানে ব্যাপক সহায়তা দরকার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা আরও বাড়ছে। জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কমে আসছে। আক্রান্ত এলাকাগুলোতে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরবরাহের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।’
উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ভারী যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। এতে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও হাত দিয়ে জীবিতদের উদ্ধার করতে হচ্ছে অনেককে।
মিয়ানমার ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রোগ্রাম উপ-পরিচালক লরেন ইলারি বলেন, ‘কী মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা বর্তমান পর্যায়ে এসে আমরা পরিষ্কার হতে পারছি না। মান্দালয়ের আশি শতাংশ ভবন ভেঙে পড়েছে।’
দেশটির তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ও ২২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, ‘আঘাত ও অস্ত্রোপচারের চিকিৎসার জন্য জরুরি সহায়তা দরকার। রক্ত সরবরাহ, চেতনানাশক, অপরিহার্য চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা প্রয়োজন।’
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি ভবন ধসে পড়েছে।