মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়াল

মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ৬০০ ছাড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উদ্ধার কাজে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় অনেককে খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে জীবিতদের উদ্ধারের চেষ্টা করতে হচ্ছে। খবর বিবিসির।
ভূমিকম্পে মিয়ানমারের প্রাচীন রাজধানী এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রায় ১৫ লাখ মানুষের এই শহর এখন চরম সংকটের মুখে।
সরঞ্জামের অভাব, নড়বড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও সেতুর কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। দেশটির সামরিক সরকার ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলের পর থেকে গৃহযুদ্ধের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
গত শুক্রবার থেকে উদ্ধার কাজ শুরু হলেও এখনও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে সহায়তা পৌঁছায়নি। ফলে সাধারণ মানুষ নিজেরাই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিখোঁজদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই ব্যক্তি ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া এক তরুণীকে উদ্ধার করার চেষ্টা করছেন। স্থানীয়রা জানান, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া মানুষ বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন।
মান্দালয়ের একটি ১২ তলা ভবন ধ্বসের ৩০ ঘণ্টা পর একজন নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে রেড ক্রস জানিয়েছে, এখনও অন্তত ৯০ জন ওই ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছেন।
একটি কিন্ডারগার্টেন ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে ১২ জন শিশু ও এক শিক্ষকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, ইয়াঙ্গুন, রাজধানী নেপিদো এবং মান্দালয়ের সংযোগকারী প্রধান মহাসড়কের ফাটল ও বিকৃতি ব্যাপক পরিবহন সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
চিকিৎসা সরঞ্জামেরও তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ট্রমা কিট, রক্তের ব্যাগ, অ্যানেস্থেসিয়া ওষুধ, জরুরি ওষুধ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য তাঁবু পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে নেই।
উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, ‘‘আমরা শুধু তখনই কাউকে উদ্ধার করতে পারি, যখন তাদের আওয়াজ পাই।’’
গত শনিবার মান্দালয়ের কিয়াউকসে জেলার সিন্তকাই শহরের একটি বেসরকারি স্কুলের ধ্বংসস্তূপ থেকে একাধিক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়। তবে ছয়জন—পাঁচজন নারী ও একজন পুরুষ—উদ্ধারের আগেই মারা যান। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্কুলকর্মীরাও রয়েছেন।

একজন উদ্ধারকর্মী বিবিসিকে বলেন, ‘‘সরঞ্জামের অভাবের কারণে উদ্ধার কাজ অনেক ধীরগতিতে চলছে। আমাদের হাতে যা আছে, তা দিয়েই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একটি মেয়ে ধসে পড়া স্কুলের নিচে আটকে আছে, আমরা তাকে বের করার চেষ্টা করছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে।’’
যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকট উদ্ধার কাজকে আরও কঠিন করে তুলেছে। মান্দালয়ের একজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের ইন্টারনেট নেই, মোবাইল সংযোগ নেই, ফলে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’’
তিনি আরও জানান, ‘‘উদ্ধার কাজ সমন্বয়ের অভাবে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। কেউ নেতৃত্ব দিচ্ছে না, কী করতে হবে সেটাও কেউ বলছে না। স্থানীয় বাসিন্দারাই নিজেরাই লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন, কিন্তু এত লাশ কোথায় নিয়ে যাবেন, তা তারা জানেন না। হাসপাতালগুলো রোগীতে উপচে পড়ছে।’’
সামরিক সরকার জানিয়েছে, মান্দালয়ে ভূমিকম্পে এক হাজার ৫০০-এর বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে এবং বিদ্যুৎ ফিরিয়ে আনতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ভূমিকম্পের কারণে মান্দালয় বিমানবন্দরের রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সামরিক সরকার জানিয়েছে, বিমানবন্দর পুনরায় চালুর কাজ চলছে এবং সেখানে অস্থায়ী হাসপাতাল ও ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছে।
মান্দালয়ের কাছাকাছি সাগাইং অঞ্চলে সংযোগকারী পুরনো সেতু সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে এবং নতুন সেতুতে ফাটল ধরেছে, ফলে উদ্ধারকারী দল পৌঁছাতে পারছে না।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেন, ‘‘এখন জরুরি উদ্ধারকর্মীদের সাহায্য খুবই দরকার। এখানে প্রচুর মানুষ আটকে পড়েছেন, কিন্তু কেউ উদ্ধার করতে পারছে না। আমরা দুইটি সেতু পার হতে পারছি না, ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই আটকে আছি। দয়া করে সাহায্য পাঠান’’।
নেপিদোতেও ভূমিকম্পের প্রভাব পড়েছে, যেখানে সামরিক সরকারের সদর দপ্তর অবস্থিত। সেখানে প্রচুর হতাহত ও ভবনধসের ঘটনা ঘটেছে।