পারমাণবিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব জাতীয় স্বার্থবিরোধী : খামেনি

তেহরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে কিনা- সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক মনোভাবের বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, পারমাণবিক ইস্যুতে চুক্তিতে পৌঁছাতে মার্কিন প্রস্তাব পুরোপুরি জাতীয় স্বার্থবিরোধী।
গত এপ্রিল থেকে শত্রুভাবাপন্ন দেশ দুটি পাঁচবারেরও বেশি আলোচনায় বসেছে নতুন চুক্তিতে পৌঁছাতে। ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পর যখন প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন সে সময় এর আগে বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষর করা চুক্তি থেকে বেরিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প আবার নতুন করে আলোচনা শুরু করার পর থেকে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক ইস্যুতে এখনো কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। খবর এএফপির।
গত শনিবার ইরান বলেছিল যে, তারা ওমানের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের কিছু ‘উপাদান’ পেয়েছে, তবে এ বিষয়ে জনসম্মুখে খোলাসা করে জানায়নি কিছু।
বুধবার (৪ জুন) ইরানের টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তব্যে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে যে প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে তা ইরানের ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের আদর্শের ১০০ ভাগ বিরোধী।
খামেনি বলেন, স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর কাছ থেকে সবুজ সংকেতের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
পারমাণবিক ইস্যুতে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়টি সবচেয়ে বিরোধপূর্ণ প্রসঙ্গ হিসেবে এখন আলোচিত। গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তেহরান যতোই পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ চুক্তির আওতায় তাদের অধিকারের কথা বলুক না কেন, তিনি দেশটিকে কোনো ধরনের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সুযোগ দেবেন না।
এদিকে, আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের বিষয়টি পারমাণবিক কর্মসূচির মূল বিষয় এবং এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কথা থাকতে পারে না।

খামেনি তার বক্তব্যে বলেন, যদি আমাদের ১০০ আণবিক শক্তি কেন্দ্র থাকে কিন্তু সমৃদ্ধকরণের সুযোগ না থাকে তবে সেগুলো আমাদের কোনো কাজেই আসবে না, কেননা পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র চালাতে জ্বালানি প্রয়োজন। যদি আমরা এই জ্বালানি নিজেরা উৎপাদন করতে না পারি তবে যুক্তরাষ্ট্রের শরণাপন্ন হতে হবে, আর এক্ষেত্রে তাদের অনেক শর্ত থাকতে পারে।
গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ইরানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। মিশরের রাজধানী কায়রোতে জাতিসংঘের আণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ’র প্রধান রাফায়েল গ্রোসির সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) তাদের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া আলাদা আরেকটি প্রতিবেদনে আইএইএ জানায়, পারমাণবিক ইস্যুতে ইরানের সহযোগিতা মোটেও সন্তোষজনক নয়।
ইরান এখন ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে, যা ২০১৫ সালের চুক্তিতে উল্লেখ করা ৩.৬৭ শতাংশের অনেক ওপরে। তবে তাদের তৎপরতা পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতার চাইতে অনেক নিচে অবস্থান করছে। পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সক্ষমতা ৯০ শতাংশ থাকতে হয়।