দক্ষিণ কোরিয়ায় নিষিদ্ধ কুকুরের মাংস, খামারিদের মাথায় হাত

দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০২৪ সালে দেশজুড়ে কার্যকর হওয়া এই নতুন আইন অনুযায়ী, কুকুর পালন করে যারা মাংস বিক্রি করতেন তাদের ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে খামার বন্ধ করতে হবে। তবে অনেক খামার মালিক ও পশু অধিকারকর্মী বলছেন, এত কম সময়ের মধ্যে এই শিল্পকে গুটিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। খবর বিবিসির।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ কুকুর খামারে বন্দি অবস্থায় আছে, যাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। বড় আকারের এসব কুকুর নতুনভাবে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে গ্রহণ করার জন্য আগ্রহী লোকও কম, ফলে অনেক কুকুরকে হয়তো শেষ পর্যন্ত ইউথানাইজ (দয়া-মৃত্যু) করা হতে পারে।
কুকুরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ হওয়ায় প্রচণ্ড ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা। কেউ কেউ জীবিকার অভাবে ঋণে ডুবে গেছেন। খ্রিস্টান যাজক এবং খামার মালিক ৬০ বছর বয়সী রেভারেন্ড জু ইয়ং-বং বলেন, “আমরা কুকুর বিক্রি করার চেষ্টা করছি, কিন্তু কোনো ব্যবসায়ী এগিয়ে আসছে না।”
৩৩ বছর বয়সী চ্যান-উর খামারে আছে প্রায় ৬০০ কুকুর। তিনি বলেন, “সরকার আইন করেছে, কিন্তু কুকুরগুলোর ব্যাপারে কোনো পরিষ্কার পরিকল্পনা নেই। পশু অধিকার কর্মীরাও বলছেন, এখন কুকুরগুলো কোথাও রাখার জায়গা নেই।”

বড় আকারের কুকুর যেমন তোসা-ইনু প্রজাতির কুকুরগুলোকে অ্যাপার্টমেন্টে রাখা কঠিন, আর অনেকেই মনে করেন এসব কুকুর মানসিক বা শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত। ফলে পুনর্বাসনকেন্দ্রগুলো ইতোমধ্যে উপচে পড়ছে।
সরকার বলেছে, খামারিরা চাইলে কুকুরগুলো স্থানীয় শেল্টারে হস্তান্তর করতে পারবে এবং প্রতি কুকুরের জন্য সর্বোচ্চ ৬ লাখ ওন (প্রায় ৪৫০ ডলার) পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হবে। তবে তা যথেষ্ট নয় বলে দাবি করেছে ‘হিউম্যান ওয়ার্ল্ড ফর অ্যানিম্যালস কোরিয়া’ (এইচডব্লিউএকে)।
২০১৫ সাল থেকে এইচডব্লিউএকে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কুকুরকে পুনর্বাসন দিয়েছে। অনেকগুলো কুকুর কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। তবে সংগঠনটি বলছে, এত বিপুল সংখ্যক কুকুর তারা নিতে পারবে না।
সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পশুচিকিৎসাবিষয়ক অধ্যাপক চুন মিয়াং-সান বলেন, “কুকুরগুলোকে বাঁচিয়ে রেখে পরে হত্যা করলে সেটা কেবল হৃদয়বিদারক নয়, বরং তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।”
সরকারি এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ আগের বছরে কুকুরের মাংস খেয়েছেন, যেখানে ২০১৫ সালে সেই হার ছিল ২৭ শতাংশ। ফলে সামাজিকভাবে বিষয়টি ধীরে ধীরে অপ্রচলিত হয়ে পড়েছে।

এরই মধ্যে এক হাজার ৫৩৭টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত কুকুর খামারের মধ্যে ৬২৩টি বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে যেসব পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের জন্য এই পরিবর্তন যেন একেবারে আকাশ ভেঙে পড়ার মতো। অনেক খামারি দারিদ্র্যের মুখে, কেউ কেউ জীবন নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন।
খামারি সংগঠনের নেতা জু বলেন, “২০২৭ সাল নাগাদ যদি কোনো পরিবর্তন না আসে, আমি বিশ্বাস করি ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারে। আমাদের অনেকে আর এই ধাক্কা সামলাতে পারবে না।”