সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে ১ কোটির বেশি শরণার্থী

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মারাত্মক অর্থ সংকটে বিশ্বব্যাপী ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত মানুষ মানবিক সহায়তা হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, চলতি বছরের জন্য নির্ধারিত ১০.৬ বিলিয়ন ডলারের বাজেটের মাত্র ২৩ শতাংশ অর্থ এখন পর্যন্ত সংগৃহীত হয়েছে। বছরের শেষে এই বাজেট দাঁড়াতে পারে সর্বোচ্চ ৩.৫ বিলিয়ন ডলারে—যা ১২২ মিলিয়ন মানুষের চাহিদা মেটাতে অনেক কম। খবর আল জাজিরার।
ইউএনএইচসিআর-এর বহিঃসম্পর্ক বিষয়ক পরিচালক ডোমিনিক হাইড বলেন, “আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত মানুষ ইউএনএইচসিআর-এর সহায়তা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।”
যেসব দেশ তাদের অনুদান কমিয়েছে তাদের নাম প্রতিবেদনে না থাকলেও জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান কমে যাওয়ায় এই সংকট আরও প্রকট হয়েছে। গত বছর ইউএনএইচসিআর-এর মোট অনুদানের ৪০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিল, যার পরিমাণ ছিল ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ইউএনএআইডি ও বৈশ্বিক সহায়তা কর্মসূচিতে ব্যয় হ্রাসের নীতি অনুসরণ করছে।
ইউএনএইচসিআর জানায়, বর্তমানে প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা কর্মসূচি বন্ধ বা স্থগিত করতে হয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক সহায়তা ও জরুরি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ৬০ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে সুদান, মিয়ানমার ও আফগানিস্তানের মতো দেশগুলোতে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিকিৎসা, শিক্ষা, আশ্রয়, পুষ্টি এবং সুরক্ষা—এই মৌলিক খাতগুলোতে ব্যাপক কাটছাঁট করা হয়েছে।
বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ক্ষেত্রেও এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শিশুর শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
বিশেষভাবে নারী ও কিশোরীরা এই সংকটের সবচেয়ে বেশি শিকার। ইউএনএইচসিআর-এর জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ কর্মসূচির ২৫ শতাংশ বাজেট কাটা হয়েছে। আফগানিস্তানের নারীরা এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
হাইড আরও বলেন, “আত্মরক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা, নারীর ক্ষমতায়ন ও সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য যে কার্যক্রমগুলো চালু ছিল—তা ৫০ শতাংশের বেশি হ্রাস করা হয়েছে।”

বিশ্বব্যাপী সংস্থাটি এখন ৩ হাজার ৫০০ কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে, যা সদর দফতর জেনেভা ও আঞ্চলিক অফিসগুলোতে প্রভাব ফেলছে।
এই প্রতিবেদন এমন এক সময়ে এসেছে যখন সম্প্রতি জাতিসংঘের ২০২৫ গ্লোবাল এইডস আপডেট সতর্ক করে বলেছে—বৈশ্বিক সহায়তার অর্থ হ্রাসের ফলে এইচআইভি/এইডস এর ক্ষেত্রে দশকের অর্জনগুলো হারিয়ে যেতে পারে। নতুন অর্থ না এলে ২০২৯ সালের মধ্যে ৬ মিলিয়ন নতুন সংক্রমণ এবং ৪ মিলিয়ন অতিরিক্ত এইডসজনিত মৃত্যু ঘটতে পারে।