সুইদা থেকে বেদুইন যোদ্ধাদের সরাল সিরিয়ার সরকার, সংঘর্ষে বিরতি ঘোষণা

দক্ষিণ সিরিয়ার সুইদা শহর থেকে বেদুইন যোদ্ধাদের সরিয়ে নিয়েছে সিরিয়ার সরকার। সেই সঙ্গে প্রাণঘাতী এ সংঘর্ষের বিরতির ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার এক নতুন যুদ্ধবিরতি নির্দেশের পর শনিবার (১৯ জুলাই) এই ঘোষণা আসে, যা দ্রুজ ও বেদুইন গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
এর আগে, সুইদা শহর ও আশপাশের গ্রামগুলোতে মেশিনগান ও মর্টার হামলার শব্দ শোনা যায়, যদিও তখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নুর আল-দিন বাবা দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানাকে জানান, “নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির বাস্তবায়ন ও নিরাপত্তা বাহিনীর উত্তর ও পশ্চিম সুইদা প্রদেশে মোতায়েনের মাধ্যমে এই সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।”
তিনি জানান, “সুইদা শহর এখন বেদুইন যোদ্ধা মুক্ত এবং শহরের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ বন্ধ হয়েছে।”
সংঘর্ষটি শুরু হয় গত সপ্তাহে, যখন এক দ্রুজ ট্রাকচালককে অপহরণ করা হয়। এর জেরে প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু হয় এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বেদুইন যোদ্ধারা সুইদায় জড়ো হতে শুরু করে।
সংঘাতে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীও যুক্ত হয়। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন বুধবার (১৬ জুলাই) ইসরায়েল সুইদা ও দামেস্কে বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েল দাবি করে, দ্রুজ সম্প্রদায়ের ওপর সরকার বাহিনীর নির্যাতন ঠেকাতেই তারা এই হামলা চালিয়েছে।
সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৬০ জন নিহত এবং এক হাজার ৭০০ জন আহত হয়েছেন। তবে কিছু মানবাধিকার সংস্থা বলছে, মৃতের সংখ্যা ৯০০-এর বেশি। এছাড়া, এই সংঘর্ষের ফলে ৮৭ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছেন।
এই সংঘর্ষ সিরিয়ার নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আল-শারা গত ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদকে হটিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
শনিবার এক টেলিভিশন ভাষণে প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা বলেন, “আমরা বেদুইন গোত্রগুলোর সাহসী অবস্থানের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে এখন সময় এসেছে অস্ত্র ফেলে রাষ্ট্রের নির্দেশনা মেনে নেওয়ার। আমাদের একসাথে থাকতে হবে, যাতে বিদেশি হস্তক্ষেপ ও অভ্যন্তরীণ ফাটল রোধ করে দেশকে স্থিতিশীল রাখা যায়।”
তিনি ইসরায়েলি হস্তক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “এই হস্তক্ষেপ আমাদের দেশকে বিপজ্জনক এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে।”
বেদুইনদের প্রত্যাহার
প্রেসিডেন্টের আহ্বানের পর বেদুইন গোষ্ঠী এক বিবৃতিতে জানায়, “সুইদার গোত্র ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা যুদ্ধবিরতি মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং শহর থেকে আমাদের সকল যোদ্ধা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।”
দামেস্ক থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক মোহাম্মদ ভাল জানান, দ্রুজ সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকেও যুদ্ধবিরতির প্রতি সম্মতি দেখা গেছে। দ্রুজদের একজন গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক নেতা হিকমত আল হাজরি সুইদা শহর থেকে বেদুইন যোদ্ধাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে তিনি সতর্ক করে জানান, “যদিও যুদ্ধ থেমেছে, কিন্তু এখনও কিছু এলাকায় মাঝেমধ্যে গুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। দ্রুজদের মধ্যে অনেকে এখনও যুদ্ধবিরতিতে আপত্তি জানাচ্ছেন।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জর্ডান, সিরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকেরা সুইদায় যুদ্ধবিরতি স্থায়ী করতে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। এতে অংশ নেন জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি, সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শিবানি এবং মার্কিন বিশেষ দূত থমাস বারাক।

তারা যুদ্ধবিরতি রক্ষায় আটক ব্যক্তিদের মুক্তি, নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন এবং স্থানীয় পুনর্মিলন প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক্সে এক পোস্টে লেখেন, “সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে সংঘর্ষে আমরা মর্মাহত। স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অত্যন্ত জরুরি।”
ফ্রান্স, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশও যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং সিরিয়াকে জনগণের নিরাপত্তা ও অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।