সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি আলোচনায় সম্মত থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া

সীমান্তে কয়েকদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। শনিবার (২৬ জুলাই) দুই দেশের পক্ষ থেকে একযোগে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। খবর সিএনএনের।
ট্রাম্প জানান, তিনি কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এবং থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম উইচায়াচাইয়ের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেছেন এবং উভয় পক্ষই অবিলম্বে আলোচনায় বসতে ও যুদ্ধবিরতির দিকে অগ্রসর হতে রাজি হয়েছেন।
ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, “তারা সম্মত হয়েছে দ্রুত সাক্ষাৎ করতে এবং যুদ্ধবিরতি, সর্বোপরি শান্তি অর্জনের জন্য কাজ করতে!”
তিনি আরও জানান, তিনি দুই নেতাকেই সতর্ক করে বলেছেন— যদি সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ চলতে থাকে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি করা হবে না।
ট্রাম্প লেখেন, “তারা আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে ফিরে আসতে চাচ্ছে, কিন্তু আমরা মনে করি, যতক্ষণ না লড়াই বন্ধ হচ্ছে, ততক্ষণ এটি অনুচিত।”
চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়াকে চিঠি পাঠিয়ে তাদের অধিকাংশ পণ্যের ওপর ৩৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়। এরপরই দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা এগিয়ে নিতে বেশ কিছু প্রস্তাব দেয়।
রোববার (২৭ জুলাই) ভোরে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে অবিলম্বে এবং শর্তহীন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কম্বোডিয়া সম্মত।”
তিনি আরও জানান, এর আগেই তিনি আসিয়ান চেয়ার ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে যুদ্ধবিরতির জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।
অন্যদিকে, থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, “কাম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে আন্তরিক উদ্যোগ দেখতে চায় থাইল্যান্ড।”
তবে তারা এটাও নিশ্চিত করে যে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন যাতে তিনি কম্বোডিয়াকে জানান যে, “যুদ্ধবিরতি এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজে পেতে থাইল্যান্ড দ্রুত দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসতে চায়।”
ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের সময় নির্ধারিত সীমান্ত নিয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে। নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হওয়ায়, অভিজ্ঞ এবং যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী এখন মুখোমুখি হয়েছে তুলনামূলকভাবে নতুন ও চীনের ঘনিষ্ঠ কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর।
বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু মানুষ নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে বহু এবং প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দুই দেশ। শনিবার পর্যন্ত সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন,
“এই বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে জাতিসংঘ যেকোনো সহায়তা দিতে প্রস্তুত।”
এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। সংঘর্ষ থামাতে আলোচনায় সম্মত হওয়াকে বিশেষজ্ঞরা স্বাগত জানালেও, তারা বলছেন — এখন প্রয়োজন দ্রুত বাস্তব পদক্ষেপ এবং স্থায়ী সমাধানের পথ।