গাজায় একদিনে নিহত আরও ৮৩, জাতিসংঘের উদ্বেগ

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজা উপত্যকায় একদিনেই আরও ৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৩ জনই ছিলেন ত্রাণ নিতে আসা সাধারণ মানুষ। এই ভয়াবহতার মধ্যেই বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা (আইপিসি) সতর্ক করেছে, গাজায় এখন ‘দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি’ তৈরি হচ্ছে।
ভয়াবহ হামলা ও ত্রাণ বিতরণে বাধা
চিকিৎসা সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য যুদ্ধ সাময়িক বিরতি ঘোষণা করা হলেও ইসরায়েলি বাহিনী মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহ এলাকায় রোবট, ট্যাঙ্ক ও ড্রোন ব্যবহার করে বোমা হামলা চালিয়েছে। আল জাজিরার তারেক আবু আযুম জানিয়েছেন, বাসিন্দারা এই রাতটিকে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করেছেন, যা আসন্ন ইসরায়েলি স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এদিকে, বিতর্কিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত বিতরণ পয়েন্টের কাছে ইসরায়েলি বাহিনী এখনো ত্রাণ প্রার্থীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে। আল জাজিরার হিন্দ খোদারি জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের এখনো জিএইচএফ পয়েন্টে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই এবং অনেকেই আহত ও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ত্রাণ আনতে গিয়ে।
ক্ষুধা ও অপুষ্টির মর্মান্তিক চিত্র
আইপিসি তার প্রতিবেদনে বলেছে, গাজায় খাদ্য গ্রহণ তীব্রভাবে কমে গেছে। প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন মানুষ কয়েকদিন ধরে খাবার ছাড়াই দিন কাটাচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অংশে খাদ্য গ্রহণের জন্য দুর্ভিক্ষের সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং গাজা শহরের তীব্র অপুষ্টি চরম আকার ধারণ করেছে। নিরন্তর সংঘাত, ব্যাপক স্থানচ্যুতি, মারাত্মকভাবে সীমিত মানবিক অ্যাক্সেস ও স্বাস্থ্যসেবাসহ প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোর পতনের মধ্যে সংকটটি একটি উদ্বেগজনক ও মারাত্মক মোড় নিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ের প্রথমার্ধে অপুষ্টি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে ২০ হাজারেরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টির জন্য চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে, যাদের মধ্যে তিন হাজারের বেশি শিশু গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৮৮ শিশুসহ কমপক্ষে ১৪৭ জন অপুষ্টিতে মারা গেছেন বলেও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আইপিসি রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেছেন, সাহায্য সরবরাহ আর বাধাগ্রস্ত বা বিলম্বিত করা উচিত নয়। জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলো গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) এর পর্যাপ্ত সাহায্য প্রদানে ব্যর্থতা এবং এর সাহায্য বিতরণ কেন্দ্র ও আশেপাশের ভয়াবহ নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য তীব্র সমালোচনা করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘের নারীর নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহুস বলেছেন, গাজার ১০ লাখ নারী ও মেয়ে খাদ্যের সন্ধানে অনাহারে থাকা বা তাদের জীবনের ঝুঁকি নেওয়ার অকল্পনীয় পছন্দ-এর মুখোমুখি হচ্ছে। তিনি মানবিক সাহায্যের অবাধ প্রবেশাধিকার, বন্দিদের মুক্তি ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়াও মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) যুক্তরাজ্য গাজায় প্রথমবারের মতো বিমান থেকে সাহায্য পাঠিয়েছে, যাতে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের জীবন রক্ষাকারী সরবরাহ রয়েছে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোট ঘোষণা করেছেন, প্যারিস জর্ডানের সঙ্গে সমন্বয়ে গাজায় ৪০ টন সাহায্য বিমানে ফেলবে। অধিকার গোষ্ঠীগুলো অবশ্য সতর্ক করে দিয়েছে, ছিটমহলে বিমানে সাহায্য ফেলা অদক্ষ ও বিপজ্জনক। তারা সীমান্ত ক্রসিং খোলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৬০ হাজার ৩৪ জন ছাড়িয়ে গেছে।