যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন, অচলাবস্থা এড়াতে সিনেটরদের দৌড়ঝাঁপ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে তীব্র মতবিরোধের কারণে দেশজুড়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানের শাটডাউন চলছে। সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যেই রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট–উভয়পক্ষই এখন আশা করছে তাদের প্রতিপক্ষ আগে পিছু হটবে। খবর এএফপির।
সরকারি খরচের অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ায় তহবিল সংগ্রহের চুক্তির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও কংগ্রেস একমত হতে ব্যর্থ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল এজেন্সিগুলোর কাজ মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ হয়ে গেছে তবে জরুরি পরিষেবাগুলো এই শাটডাউনের আওতার বাইরে রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে দেশটিতে সাড়ে সাত লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হবে। এটি জোর করে পাঠানো এমন এক ধরনের ছুটি যাতে কর্মচারীরা কাজে না ফেরা পর্যন্ত তাদের বেতন আটকে থাকবে।
তবে সামরিক বাহিনীর মতো জরুরি বিভাগের কর্মীদের বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য করা হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, এদের কেউ কেউ আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বেতনের চেক না পাওয়ার বিষয়টি চোখের সামনে দেখতে পাবেন।
শাটডাউন মতবিরোধপূর্ণ ওয়াশিংটনের একটি ধারাবাহিক বৈশিষ্ট্য। ২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন ৩৫ দিনের রেকর্ড সময় অচলাবস্থায় পড়েছিল দেশটি। দেশটির সাধারণ ভোটারদের কাছে শাটডাউন খুবই অপ্রিয় একটি ব্যাপার, কেননা এ সময় ন্যাশনাল পার্ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানের পারমিট ইস্যু করার ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়।
তবে এবারের শাটডাউন একটি অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপট নিয়ে এসেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেশকিছু সরকারি বিভাগ বন্ধ করে দেওয়ার মতো কট্টর ডানপন্থি নীতিগুলো কার্যকর করার জন্য বেশ তাড়াহুড়ো করছেন। ইতোমধ্যে হোয়াইটর হাউস থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো কর্মীদের গণহারে চাকরিচ্যুত করা হবে।
এ বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেন, ‘শাটডাউন থেকে অনেক ভালো কিছু আসতে পারে। আমরা এমন অনেক কিছু থেকে মুক্তি পেতে পারি, যা আমরা চাইনি। সেগুলো হবে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষের বিষয়।’
এক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটরা স্বাস্থ্যসেবার ভর্তুকি দেওয়ার মেয়াদ পার হয়ে যাওয়ায় এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে দেওয়ার বিরুদ্ধে তৃণমূলের ক্ষোভের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে আলোচনার জন্য রিপাবলিকানদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যদিও প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা ইতোমধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন তহবিল প্রদানের বিল পাস করে রেখেছে। এর লক্ষ্য হলো নভেম্বর পর্যন্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা চূড়ান্ত হওয়ার আগে সরকারি কার্যক্রম চালু রাখা যায়।
তবে ১০০ সদস্যের সিনেটে বিলটি পাস করে ট্রাম্পের কাছে পাঠাতে প্রয়োজনীয় ৬০ সদস্যের সমর্থন নেই এতে। ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য খাতে পরিকল্পিত ব্যয় কমানোর বিষয়ে রিপাবলিকানরা আপস না করলে তারা এই বিলটি পাসে সহায়তা করবে না।

এ বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট সদস্য চাক শুমার সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, উভয়পক্ষের সিনেটরদের কাজ হলো একত্রিত হওয়া, আমরা এটাই আশা করছি, কেননা রিপাবলিকানরা দেখেছে তাদের পর্যাপ্ত ভোট নেই।
সরকারের কাজ পুনরায় শুরু করতে ও স্বল্পমেয়াদি প্রস্তাবগুলোর ওপর বুধবার সিনেটরদের ভোট দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু মঙ্গলবার এই দুটো প্রস্তাবই ভোটে বাতিল হয়ে গেছে। আর আলোচনার টেবিলে কোনো আপসের সম্ভাবনা না থাকায় এই পরিকল্পনা পাসের চেষ্টা আবারও ব্যর্থ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
হাউসে বিলটি পাস করতে, অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে রিপাবলিকানদের প্রয়োজন আটজন ডেমোক্র্যাট সদস্যের ভোট। মঙ্গলবার তিনজন ডেমোক্র্যাট দলের বিরুদ্ধে গিয়ে ভোট দিয়ে সফল হয়েছিলেন। রিপাবলিকানরা আশা করছে, শাটডাউনের প্রভাব তীব্র হলে তারা আরও পাঁচজন ডেমোক্র্যাটকে নিজেদের দলে টানতে পারবেন।