আর্কটিক নিরাপত্তায় বড় বিনিয়োগ ডেনমার্কের, নতুন যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা

ডেনমার্ক তার আর্কটিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতা শক্তিশালী করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড সম্পর্কিত হুমকি মোকাবিলায় প্রায় ২৭.৪ বিলিয়ন ড্যানিশ ক্রোন (৪.২৬ বিলিয়ন ডলার) ব্যয় করার পরিকল্পনা করেছে।
ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার (১০ অক্টােবর) জানিয়েছে, এই বিশাল বিনিয়োগের আওতায় দুটি নতুন আর্কটিক জাহাজ, একটি নতুন আর্কটিক কমান্ড সদর দপ্তর, উত্তর আটলান্টিকের একটি সাবমেরিন কেবল ও সমুদ্র টহল বিমান কেনা হবে। খবর আল জাজিরার।
এ ছাড়া ডেনমার্কের সেনাবাহিনী ১৬টি অতিরিক্ত এফ-৩৫ আধুনিক যুদ্ধবিমান কিনবে, ফলে তাদের মোট যুদ্ধবিমান সংখ্যা দাঁড়াবে ৪৩টিতে। ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা প্রধান মাইকেল হাইল্ডগার্ড একে দেশের “সার্বভৌমত্বের ঘোষণা” বলে উল্লেখ করেছেন।
হাইল্ডগার্ড বলেন, নতুন বিমানগুলো “ডেনমার্কের যুদ্ধক্ষমতা, নমনীয়তা এবং ন্যাটোতে অবদানকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে।”
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ও ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের হুমকির জবাবে ডেনমার্ক দ্রুত প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির অভিযান শুরু করেছে।
গত মাসেই দেশটি ইউরোপীয় নির্মিত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার জন্য ৫৮ বিলিয়ন ক্রোন (৯.২ বিলিয়ন ডলার) ব্যয়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অস্ত্রচুক্তি করেছে এবং একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র কেনার ঘোষণা দেয়।
যদিও ট্রাম্প সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ড ‘কেনার’ দাবি পুনরায় তোলেননি, ডেনমার্ক তা ভুলে যায়নি।
ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যেটে ফ্রেডেরিকসেন সংসদে বলেন, “আমরা হয়তো মনে করতে পারি কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এখনই নিশ্চিন্ত হওয়ার সময় নয়।”
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডকে “কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান” হিসেবে দেখেন এবং বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষায় গ্রিনল্যান্ড আরও ভালোভাবে আধুনিক হুমকি মোকাবিলা করতে পারবে।
তবে গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেন্স-ফ্রেডেরিক নিলসেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বলেন, “গ্রিনল্যান্ড এখন এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। গ্রিনল্যান্ডের ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রয়োজন, একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও গ্রিনল্যান্ডের প্রয়োজন।”
বাণিজ্য, জ্বালানি অনুসন্ধান এবং বিরল খনিজ আহরণের সম্ভাবনা আর্কটিক অঞ্চলকে রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে পরিণত করেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আর্কটিকে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেছেন, যা আংশিকভাবে ইউরোপ থেকে এশিয়ার দ্রুততম নৌপথ — নর্দার্ন সি রুট — উন্নয়নের পরিকল্পনার অংশ।

এদিকে চীনও রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে বিভিন্ন আর্কটিক অবকাঠামো প্রকল্পে কাজ করছে এবং নতুন নৌপথ ও প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজে গবেষণা জাহাজ মোতায়েন করছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর গত বছর সতর্ক করে জানায়, চীন ও রাশিয়া আর্কটিকে “বহুমুখী ক্ষমতার সমন্বয়ে” সহযোগিতা করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য “উদ্বেগজনক।”
তবে পুতিন বলেছেন, রাশিয়া আর্কটিকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গেও যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী।
পুতিন বলেন, “আমাদের অবস্থান যত মজবুত হবে, ততই আমরা বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে আর্কটিকে আন্তর্জাতিক প্রকল্পে কাজের সুযোগ পাব — এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গেও, যদি তারা আগ্রহ দেখায়।”