বিদ্রোহী ইউনিটের নিয়ন্ত্রণে মাদাগাস্কারের সামরিক বাহিনী

মাদাগাস্কারের সেনাবাহিনীর একটি বিদ্রোহী ইউনিট রোববার (১২ অক্টোবর) এক ঘোষণায় জানিয়েছে, তারা দেশটির সামরিক বাহিনীর পুরো নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। প্রশাসনিক ও কারিগরি কর্মকর্তাদের সম্বয়ে গঠিত ‘ক্যাপস্যাট’ কন্টিনজেন্ট গতকাল শনিবার (১১ অক্টোবর) হাজারো প্রতিবাদীদের সঙ্গে যোগ দিলে দেশটির সরকারবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়।
তবে সামরিক ইউনিটটির এই ঘোষণাকে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা ‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। খবর এএফপির।
এর আগে ক্যাপস্যাট কন্টিনজেন্ট এক ঘোষণায় জানিয়েছিল তারা ‘গুলি করার নির্দেশ’ অমান্য করবে। এই ইউনিটটি মাদাগাস্কারের সশস্ত্র পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেছে, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে এবং এ কারণেই এতো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
এক ভিডিও বার্তায় ক্যাপস্যাটের সামরিক কর্মকর্তারা ঘোষণা দেয়, এখন থেকে স্থল ও আকাশপথের বাহিনী বা মাদাগাস্কারের সেনাবাহিনী ক্যাপস্যাট সদরদপ্তরের নির্দেশ অনুসারে পরিচালিত হবে।
তবে এ বিষয়ে অন্যান্য ইউনিট বা সামরিক কমান্ড থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
শনিবার ক্যাপস্যাট ইউনিটের সৈন্যরা সশস্ত্র পুলিশের সঙ্গে সামরিক ব্যারাকের বাইরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এরপর তারা সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে রাস্তায় চলে আসে ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। বিক্ষোভকারীরা এ সময় উল্লাস প্রকাশ করে এবং রাজোয়েলিনার পদত্যাগের দাবিতে শ্লোগান দেয়।
এদিকে, রোববার এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে জানানো হয়, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে পাশ কাটিয়ে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা চলছে। বিবৃতিতে রাজোয়েলিনা ঐক্যের আহ্বান জনিয়ে বলেন, দেশ যে সংকটের মুখোমুখি হয়েছে তা থেকে উত্তরণে আলোচনাই একমাত্র পথ।
অন্যদিকে, সশস্ত পুলিশের কর্মকর্তারা এক ভিডিও বার্তায় স্বীকার করেন তাদের পদক্ষেপ ভুল ও অতিরিক্ত হয়েছে। তারা এ সময় সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র পুলিশের মধ্যে ‘ভ্রাতৃত্ব’ স্থাপনের ডাক দেন। কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমরা জনগণকে রক্ষার জন্য এখানে রয়েছি, সন্ত্রাসী তৎপরতার জন্য নয়।’ তারা আরও জনান, এখন থেকে সশস্ত্র পুলিশের সদরদপ্তর থেকেই কেবল নির্দেশ আসবে।
মাদাগাস্কারে অপ্রতুল বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের কারণে ক্ষোভ থেকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর হতে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। শনিবার (১১ অক্টোবর) চলমান সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানী আন্তানানারিভোতে এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সরকার রোববার জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা দেশেই আছেন ও তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যেদিকে, নতুন নিয়োগ পাওয়া প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকার শক্ত অবস্থানে রয়েছে এবং কথা শুনতে ও সমঝোতা করতে প্রস্তুত।
এদিকে, রাজধানীর বাইরে সোয়ানিরানা জেলার ক্যাপস্যাট কন্টিনজেন্টের কর্মকর্তারা সৈন্যদের প্রতি বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন না চালানোর আহ্বান জানিয়েছে। ২০০৯ সালে জনতার অভ্যুত্থানে সোয়ানিরানা সামরিক ঘাঁটি নেতৃত্ব দিয়েছিল যার মাধ্যমে রাজোয়েলিনা ক্ষমতায় আসেন।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সংঘাতে রূপ নেওয়ায় এ পর্যন্ত দেশটিতে ২২ জন নিহত হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা বলেছেন, সংঘাতে মারা গেছে ১২ জন ও তাদের সবাই ছিল লুটতরাজকারী। ক্যাপস্যাট কন্টিনজেন্ট জানিয়েছে, সশস্ত্র পুলিশের গুলিতে একজন সৈন্যও নিহত হয়েছে।