সব নাগরিককে ২০০০ ডলার করে দিতে চান ট্রাম্প, বাস্তবে কতটা সম্ভব?
আমদানি শুল্ক (ট্যারিফ) থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে ‘ট্রিলিয়ন ডলার’ রাজস্ব সংগ্রহ করেছে, সেখান থেকে প্রতিটি আমেরিকান নাগরিককে দুই হাজার ডলার করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ভাষায়, ‘যারা শুল্কের বিরোধিতা করে, তারা বোকার মতো আচরণ করছে! আমরা ট্রিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করছি, শিগগিরই ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল ঋণ পরিশোধ শুরু করব। যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে—ফ্যাক্টরি, প্ল্যান্ট গড়ে উঠছে সর্বত্র। প্রতিজন নাগরিককে কমপক্ষে ২ হাজার ডলারের লভ্যাংশ দেওয়া হবে (উচ্চ আয়ের মানুষ বাদে)।’
কিন্তু অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বছরে ‘ট্রিলিয়ন ডলার’ নয়, বরং কয়েকশ বিলিয়ন ডলারের মতো শুল্ক রাজস্ব পায়—যা পুরো দেশের জনসংখ্যাকে এভাবে অর্থ বিতরণ করার জন্য যথেষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সরকার শুল্ক থেকে মোট ৩০৯.২ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব পেয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৪৩.৮ বিলিয়ন ডলার বেশি। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী যদি প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানকে (ধরা যাক ১৫ কোটি মানুষ) ২ হাজার ডলার দেওয়া হয়, তাহলে খরচ হবে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ডলার—যা পুরো শুল্ক রাজস্বের সমান বা তার চেয়েও বেশি। শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করলে এই পরিমাণ আরও বাড়বে, যা ৬০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে বলে অনুমান করেছে কিমিটি ফর এ রেসপনসিবল ফেডারেল বাজেট।
ট্রাম্প প্রশাসন আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, শুল্ক রাজস্ব জাতীয় ঋণ পরিশোধ ও কর হ্রাস কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হবে। জুলাই মাসে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমরা ট্রিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করছি, যা দিয়ে আমরা কর কমাবো এবং জাতীয় ঋণ পরিশোধ করব।’
ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টও বলেন, লভ্যাংশ ‘অনেকভাবে দেওয়া যেতে পারে’। যেমন ওভারটাইম বা টিপসের ওপর কর মওকুফ, গাড়ি ঋণের সুদ কর্তন বা সামাজিক নিরাপত্তার ওপর করছাড়। অর্থাৎ সরাসরি নগদ নয়, বরং কর রেয়াতের আকারে।
ইকোনমিস্ট এরিকা ইয়র্ক বলেন, ‘২ হাজার ডলারের লভ্যাংশ দেওয়ার মতো রাজস্ব শুল্ক থেকে আসে না। বরং এই শুল্কের কারণে সাধারণ আমেরিকান পরিবারগুলো ইতোমধ্যে বছরে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ ডলার পর্যন্ত অতিরিক্ত খরচ করছে। অর্থাৎ ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘লভ্যাংশ’ আসলে লোকসান পোষানোর মতোই।’
আরবান-ব্রুকিংস ট্যাক্স পলিসি সেন্টারের জোসেফ রোজেনবার্গ বলেন, ট্রাম্প যদি সত্যিই চেক আকারে লভ্যাংশ দিতে চান, তবে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে। আগেরবার এমন প্রস্তাব দেওয়া হলেও কংগ্রেস তা অনুমোদন দেয়নি।
এদিকে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি ট্রাম্পের শুল্ক নীতির বৈধতা নিয়ে শুনানি শুরু করেছে। আদালত যদি রায় দেয় যে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের আওতায় এককভাবে শুল্ক আরোপ করতে পারেন না, তবে ভবিষ্যতের শুল্ক রাজস্বের বড় অংশই হারিয়ে যাবে।
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের ‘২ হাজার ডলারের শুল্ক লভ্যাংশ’ শোনায় আকর্ষণীয় হলেও বাস্তবসম্মত নয়। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক রাজস্ব জাতীয় ঋণ কমানো বা কর হ্রাসের জন্যই যথেষ্ট নয়—তার ওপর জনগণকে নগদ অর্থ দেওয়ার মতো পরিমাণও নয়। বরং এই শুল্ক নীতি ইতিমধ্যেই আমেরিকান নাগরিকদের পকেট থেকে আরও বেশি অর্থ বের করে নিচ্ছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক