যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন সুদানের সেনাপ্রধান
যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন সুদান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। তার অভিযোগ, এই প্রস্তাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সম্পৃক্ততা থাকার কারণে এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
স্থানীয় সময় রোববার (২৩ নভেম্বর) রাতে সেনা সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে আল-বুরহান বলেন, ‘কোয়াড’—অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র, ইউএই, সৌদি আরব ও মিসরের দেওয়া প্রস্তাবটি ‘এ পর্যন্ত দেওয়া সবচেয়ে খারাপ প্রস্তাব’।
তিনি অভিযোগ করেন, এই পরিকল্পনা কার্যত সুদানের সশস্ত্র বাহিনীকে দুর্বল করে দেশটির সব নিরাপত্তা সংস্থা বিলুপ্ত করার পথ খুলে দেয়, অথচ বিদ্রোহী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে তাদের দখল করা এলাকাগুলোতে ধরে রাখার সুযোগ করে দেয়।
আল-বুরহান স্পষ্ট করে জানান, কোনো যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে আরএসএফকে অবশ্যই নির্দিষ্ট এলাকায় সরে যেতে হবে।
সুদান সেনাপ্রধান আবারও অভিযোগ করেন, ইউএই বিদ্রোহী আরএসএফকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে এবং সংঘাত দীর্ঘায়িত করছে।
আল-বুরহান বলেন, ‘বিশ্ব দেখেছে, ইউএই কীভাবে সুদানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সমর্থন দিয়েছে। এ ধরনের পক্ষপাতমূলক ভূমিকায় কোয়াডের মধ্যস্থতা বিশ্বাসযোগ্য নয়।’
ইউএই অবশ্য এসব অভিযোগকে ‘সস্তা প্রচারণা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
আল-বুরহান বিশেষভাবে আক্রমণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের আঞ্চলিক বিষয়ক উপদেষ্টা মাসাদ বুলোসকে। তিনি বলেন, বুলোস সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবিক সাহায্য আটকে রাখা ও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তুলে শান্তি প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছেন।
তবে তিনি ট্রাম্প ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রশংসা করেন, যারা সাম্প্রতিক বৈঠকে সুদানের যুদ্ধ অবসানের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উত্থাপন করেছেন।
এদিকে আরএসএফ জানিয়েছে, তারা কোয়াড প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে, কারণ এটি যুদ্ধের ‘ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি’ লাঘবের সুযোগ তৈরি করবে। প্রস্তাবে তিন মাসের যুদ্ধবিরতি ও একটি বেসামরিক সরকারের পথ সুগম করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে বাস্তবে আরএসএফ এখনও সুদানের পশ্চিমাঞ্চল দারফুরে ব্যাপক সহিংসতা চালাচ্ছে। এল-ফাশের শহর দখলের পর স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, আরএসএফ যোদ্ধারা ব্যাপকহারে আগুন লাগাচ্ছে, লাশ গণকবরে চাপা দিচ্ছে এবং গণহত্যার প্রমাণ মুছে ফেলছে।
এছাড়া ব্যাপক ধর্ষণ, নিখোঁজ হওয়া এবং বেসামরিক হত্যার অসংখ্য ঘটনা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিশ্চিত করেছে।
সুদানের কেন্দ্রীয় কোরদোফান অঞ্চলেও সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার (২২ নভেম্বর) আরএসএফ দাবি করে, তারা খুব শিগগির পশ্চিম কোরদোফানের গুরুত্বপূর্ণ বাবনুসা শহরটি দখল করবে।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের সংগ্রাম খার্তুমসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ যুদ্ধের জন্ম দিয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়ালেও সহায়তাকারী সংস্থাগুলো বলছে প্রকৃত সংখ্যা এর বহুগুণ বেশি হতে পারে।
জাতিসংঘ আরও সতর্ক করেছে, সুদানের যুদ্ধ বর্তমানে বিশ্বের ‘সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট’ তৈরি করেছে, যেখানে লাখো মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে এবং বহু এলাকা দুর্ভিক্ষের মুখে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক