পদ্মায় পানির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ শুরু করল কমিশন
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের বাংলাদেশের পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট এবং ভারতের ফারাক্কা পয়েন্টে পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ শুরু হয়েছে। গতকাল সোমবার (১ জানুয়ারি) ভারতীয় জল ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দুই সদস্যের প্রতিনিধিদলের ভারতীয় পানি কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অঙ্কিত দুদেজা ও সহকারী পরিচালক মুকেশ কুমার শর্মা এবং বাংলাদেশের পক্ষে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের প্রধান পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম সরেজমিন পানি প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন।
সূত্র জানায়, একটি ট্রলারে করে বেলা ১২টা থেকে যৌথ নদী কমিশনের সদস্যরা পর্যবেক্ষণ শুরু করে একটানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অটোমেশিনের সহায়তায় পানির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ করেন।
পর্যবেক্ষণ দলের বাংলাদেশের প্রধান পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম এনটিভিকে বলেন, ‘পানির প্রবাহ হতাশাব্যঞ্জক। ১ জানুয়ারি শুরু হয়ে এই পর্যবেক্ষণ চলবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত। এ সময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও ফারাক্কা পয়েন্টের প্রবাহ অনুযায়ী দুদেশের মধ্যে পানি বন্টন হবে।’
মো. রেজাউল করিম জানান, এবারের প্রবাহ অনেক কম। গত বছর ১ জানুয়ারি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ৯০ হাজার ৭০০ কিউসেক এবং ওয়াটার লেভেল ছিল ৬ দশমিক ৪০ মিটার। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি সেই প্রবাহ ও লেভেল হয়েছে যথাক্রম ৭৫ হাজার ৪০৯ কিউসেক এবং ৫ দশমিক ৫৯ মিটার।
রেজাউল করিম আরও জানান, গত বছরের তুলনায় পানির প্রবাহ কমেছে যথাক্রমে ১৫ হাজার ২৯১ কিউসেক এবং ওয়াটার লেভেল কমেছে দশমিক ৮১ মিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মা নদী বেষ্টিত পাবনা, কুষ্টিয়া, নাটোর, রাজশাহী, নওগাঁ ও মেহেরপুর জেলার অন্তত তিন কোটি মানুষ ফারাক্কার বাঁধের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প, পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, পানাসি প্রকল্প, বরেন্দ্র প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের হাজার হাজার একর জমিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও পাম্প ব্যবহার করে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ভাবে পানির প্রবাহ ও গভীরতা কমতে থাকলে আগামীতে ভয়াবহ পানি সংকট হতে পারে।
সূত্র জানায়, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি পিলারের মধ্যে ১২টি পিলারই শুকনো চরে দাঁড়িয়ে আছে। যে তিনটি পিলার পানিতে রয়েছে তার আশপাশে মানুষ চাষাবাদ করছে। নদীতে মাছ নেই। জেলেরা নৌকা দিয়ে জাল টেনে নিজেদের খাবারের মাছও যোগার করতে পারছেন না। এদিকে ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মার ১৮টি শাখা নদীসহ উত্তরাঞ্চলের ৫৪টি নদী শুকিয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ছে।
সুত্র আরও জানায়, পানি চুক্তির পর থেকে গত ২৭ বছরে বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যা পায়নি। এবারও ন্যায্য পানি পাবে না বলে আশঙ্কা করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম।