বরগুনায় তৌহিদী জনতার আগুনে পোড়া মাজার পরিদর্শনে ডিসি

বরগুনার আমতলীতে মাজারে হামলা হওয়ায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শফিউল আলম। আজ সোমবার (১৭ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইসমাইল শাহ মাজারটি পরিদর্শন করেন তিনি।
এ সময় ডিসির সঙ্গে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জহিরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান, আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল ইসলাম আরিফ উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম উভয় পক্ষকে ডেকেছেন। পরে শান্ত থেকে আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে অনুরোধ করেন তাদের। এরপরও যদি কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে, সে যেই হোক কাউকে এক চুল পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
গতকাল রোববার রাত সোয়া ১২টার দিকে আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকায় ইসমাইল শাহ মাজারে বার্ষিক ওরশ চলার সময় মাজার ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ তৌহিদী জনতা। প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এর আগেই আগুনে মাজারের ভেতরের সামিয়ানা ও দুটি বৈঠকখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন।
জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের বটতলা এলাকায় ১৯৯৬ সালে ইসমাইল শাহ এর মাজার স্থাপন করা হয়। ওই সময় থেকে মাজার কর্তৃপক্ষ দুই দিনব্যাপী ওরশ উৎযাপন করে আসছেন। ২৮তম ওরশ গতকাল রোববার সন্ধ্যায় শুরু হয়। ওদিন রাতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে তাদের শতাধিক সমর্থক ও তৌহিদী জনতা এসে মাজার কর্তৃপক্ষকে মাজারে গান বাজনা বন্ধ করতে বলেন।
কিন্তু মাজারের প্রধান খাদেম অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল ওরশ বন্ধে অপরগতা প্রকাশ করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে তৌহিদী জনতা লাঠিসোটা নিয়ে মাজারে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ওই ওরশে আসা হাজার হাজার ভক্ত ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন।
খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারেক হাসান ও আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আহতরা হলেন—সোলায়মান (৩৮), রেজাউল (১৮), বাদল মৃধা (৪০), দুলাল মৃধা (৪২), আবু বকর (২৯), আবুল হোসেন (২৮), আব্দুল্লাহ আল নোমান (২৮), মো. মামুন (৪৩), আবুল কালাম (৪২), জোবায়ের (১৯) ও ফজলুল করিম (২৭)। তাদের আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আমতলী ফায়ার স্টেশনের ওয়ার হাউস ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ হানিফ বলেন, দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুনে মাজারের ভেতরের সামিয়ানা ও দুটি টিনের ঘর পুড়ে গেছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রাসেদ মাহমুদ রোকনুজ্জামান বলেন, আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী শাখার সভাপতি ওমর ফারুক জেহাদী ও সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদের নেতৃত্বে শতাধিক তৌহিদী জনতা লাঠিসোঠা নিয়ে এসে মাজার ভাঙচুর করে। পরে মাজারে আগুন দেয়।
ইসমাইল শাহ মাজারের প্রধান খাদেম অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, আগুনে মাজারের ভেতরের গিলাব ও দুটি বৈঠকখানা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমতলী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী বায়েজিদ বলেন, মুফতি মাওলানা ওমর ফারুকসহ আমাদের বেশ কিছু সমর্থক ও তৌহিদী জনতা গিয়ে মাজারের প্রধান খাদেম অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলকে পবিত্র রমজান মাসে মাজারে গান-বাজনা করতে নিষেধ করেন। কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ। এক পর্যায় তার ভক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদীর গায়ে হাত তুলে। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে মাজারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি মাওলানা ওমর ফারুক জেহাদী বলেন, এই মাজারটি ভণ্ডের আস্তানা। এখানে ওরশের নামে গানবাজনা, মাদক সেবন ও নারীদের আসর বসে। আর মাজারটির ভক্তরা নারীদের পীরের কবরে ও প্রধান খাদেম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুলের পায়ে প্রকাশ্যে সেজদা দেয়। ওরসে প্রকাশ্যে নারী পুরুষদের গান বাজনাও চলে।
আমতলী থানার ওসি মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে মাজারটিতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বলেন, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।