ভূমিকম্পের পর গুগলে সবচেয়ে বেশি সার্চ করা হয় যেসব তথ্য
সম্প্রতি বাংলাদেশে ৩২ ঘণ্টার ব্যবধানে চারবার ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে ২১ নভেম্বর সকালের কম্পনটি ছিল অনেক তীব্র। এ ভূমিকম্পে অন্তত ১০ জন নিহত এবং কয়েক শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
এই ভূমিকম্পের পর বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন— খুব কাছাকাছি সময়ে বড় ধরনের ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে পারে বাংলাদেশ।
দেশের মানুষের মনেও এ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে এ সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অনেকেই গুগলের দারস্ত হচ্ছেন।
গত শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশের অনেকেই সার্চ করেছে— বাংলাদেশের কোন এলাকা বেশি ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে। এর উত্তরে বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে গুগল জানাচ্ছে, ভূকম্পনের ঝুঁকি বিবেচনায় বাংলাদেশকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি অংশকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
সূত্রমতে, সিলেট, ময়মনসিংহ এবং রংপুর, ঢাকা, কুমিল্লা ও পার্বত্য, চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু অংশ ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগা, রাজশাহী, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জের অংশবিশেষ এবং চট্টগ্রাম মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। আর ভূমিকম্পের তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলো।
গত কয়েকদিন ধরে দেশের মানুষ গুগলে সার্চ করে জানতে চেয়েছেন— ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া কি সম্ভব?
বিজ্ঞানীদের বরাদ্দ দিয়ে গুগল জানাচ্ছে— কোনো এলাকায় ভূমিকম্প হওয়ার সংখ্যা জানা সম্ভব। কিন্তু ঠিক কখন কোথায় ভূমিকম্প হবে, সেটি আদৌ বলা সম্ভব নয়।
তবে আগে থেকে ভূমিকম্পের সঠিক সময় জানা না গেলেও রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিক পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে ভূমিকম্পের এ ধরনের রিয়েল টাইম পূর্বাভাস দেওয়ার পদ্ধতি কার্যকর রয়েছে। সাধারণত এরকম মেসেজ পাওয়ার পাঁচ থেকে ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই ভূমিকম্প টের পাওয়া যায়।
ভূমিকম্প নিয়ে গুগলের সতর্কবার্তা কতটা নির্ভরযোগ্য— এ প্রশ্নও সার্চ করা হয়েছে গুগলে।
এর উত্তরে গুগল বলছে— কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও গুগলের সতর্কবার্তা মোটামুটি নির্ভরযোগ্য। এই সতর্কবার্তা আপনাকে ভূকম্পন শুরু হওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে পাঠাবে। আর এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনি টেবিল বা খাটের নিচে আশ্রয় নেওয়ার সময় পাবেন কিংবা ট্রেনের গতি কমানোর সুযোগ পাবেন। বড় ধরনের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে এই সিস্টেম অনেকের জীবন বাঁচাতে সক্ষম হবে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
গত শুক্রবারের ভূমিকম্পের পর অনেকেই গুগলে জানতে চাইছেন— ভূমিকম্প কেন হয়।
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের বরাদ দিয়ে গুগল জানাচ্ছে— পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ কয়েকটি টেকটনিক প্লেটে বিভক্ত, যেগুলো ভূগর্ভে তরল পদার্থের উপর ভাসছে। এই প্লেটগুলো গতিশীল এবং একে অপরের সাপেক্ষে অবস্থান পাল্টাচ্ছে। যেসব স্থানে একটি প্লেট এসে আরেকটি প্লেটের কাছাকাছি মিশেছে বা ধাক্কা দিচ্ছে বা ফাটল তৈরি হয়েছে সেটাকে বলা হয় ফল্টলাইন। এই প্লেটগুলো যখন সরে যায় বা নড়াচড়া করতে থাকে কিংবা একটি অন্যটিকে ধাক্কা দিতে থাকে তখন এক ধরনের শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে। আর সে শক্তি যখন সেখানকার শিলার ধারণ ক্ষমতা পেরিয়ে যায় তখন আগে থেকে থাকা কিংবা নতুন তৈরি হওয়া ফাটল কিংবা শিলা ব্লক একটি আরেকটির উপর উঠে গিয়ে সেখানে সঞ্চিত শক্তি বেরিয়ে আসলেই ভূপৃষ্ঠের কম্পন অনুভূত হয়।
গত কয়েকদিনে গুগলে সার্চ করে অনেকেই জানতে চেয়েছেন— ভূমিকম্প হলে আমাদের করণীয় কি? এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা ক্ষতি কমাতে প্রত্যেকের বাড়িতে একটি জরুরি প্যাক তৈরি রাখার কথা বলছেন। জরুরি সেই প্যাকে থাকবে অতিরিক্ত খাবার পানি, একটি টর্চ, প্রাথমিক চিকিৎসার কিট এবং কিছু শুকনো খাবার। সেই সাথে কিছু নগদ অর্থ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত নথিপত্রের কপি, ঔষুধের তালিকা ইত্যাদিও থাকবে সেই প্যাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প ঘটার সময় দৌড়ে বাইরে যাওয়া কিংবা অন্য ঘরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। আপনি এমন স্থানে থাকুন যেখানে আপনার আহত হওয়ার সম্ভাবনা কম। বসে পড়ুন, কিছু একটার তলায় ঢুকে পড়ুন। কাছাকাছি অন্য কোনো আশ্রয় না থাকলে কোনো টেবিল বা ডেস্কের নিচে ঢুকে পড়তে পারেন। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি সেখানেই থাকতে পারেন। ঝাঁকুনি একেবারে থেমে যাওয়ার পর সাধারণত খোলা জায়গায় বের হওয়া নিরাপদ। কারণ আপনি যে বিল্ডিংয়ে থাকেন সেটিও ধসে পড়তে পারে।
যদি বাইরে থাকা অবস্থায় ভূমিকম্প শুরু হয় সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। তবে বিল্ডিং, বৈদ্যুতিক তার, টেলিফোনের খুঁটি, ম্যানহোল, জ্বালানি এবং গ্যাসের লাইন থেকে দূরে সরে দাঁড়ান। ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এটিকে প্রতিরোধ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে একটু সচেতনতা অবলম্বন করলে ক্ষয়ক্ষতি ও মৃত্যুর পরিমাণ কমানো যেতে পারে। কিছুটা হলেও কমানো যেতে পারে মানবিক বিপর্যয়।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক