চিকিৎসকের অবহেলায় শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ, শ্রমিকদের বিক্ষোভ
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগরে একটি চা বাগানে চিকিৎসকের অবহেলায় দুই মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আলীনগর চা বাগানের শতাধিক চা শ্রমিক কাজ বর্জন করে বিক্ষোভ ও চা কারখানা ঘেরাও করেন। পরে প্রশাসন ও বাগান কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
জানা গেছে, আলীনগর চা বাগানের দেওয়াল টিলা এলাকার বাসিন্দা সুকুমার নায়েকের দুই মাস বয়সী অসুস্থ শিশুকে গতকাল বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ডানকান ব্রাদার্স পরিচালিত আলীনগর চা বাগান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ না থাকায় শিশুটির বাবা বাইরে থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে আনেন। একপর্যায়ে শিশুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য ক্যামেলিয়া ডানকান হাসপাতালে স্থানান্তরের অনুরোধ জানায়।
অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক সুকন্যা প্রীতি ঊষা সময়ক্ষেপণ করায় শিশুটিকে অন্যত্র পাঠানো হয়নি। এর ফলে রাত ৮টার দিকে শিশুটির মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে আলীনগর চা বাগানের শ্রমিকরা কাজ বর্জন করে প্রথমে বাগান হাসপাতাল ঘেরাও করেন। পরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাগানের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন এবং একপর্যায়ে চা কারখানার সামনেও বিক্ষোভ শুরু করেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বিষয়টি কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হয়। তার নির্দেশে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরবর্তীতে বাগান কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও শ্রমিকদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবুল হোসেন, চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি গণেশ পাত্র, সম্পাদক চন্দন বাগতি, চা ছাত্র যুব পরিষদের নেতা সজল কৈরীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আলীনগর চা বাগানের প্রধান ব্যবস্থাপক এ. জে. এ. রফিউল আলম বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নিহত শিশুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আউয়াল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুই দফায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চা বাগানের হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় এক শিশুর মৃত্যুর খবর শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা হবে। একই সঙ্গে শিশু মৃত্যুর পর শ্রমিকরা যে দাবিগুলো উত্থাপন করেছেন, সেগুলো নিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আহাদ মিয়া, মৌলভীবাজার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ)