বাংলাদেশ ছাড়তে হতো তাই বলিউডের হাতছানি উপেক্ষা করেছিলেন জেমস
অভিমানে ঘর ছেড়েছিল কিশোর ফারুক মাহফুজ আনাম। তবে সেটা পছন্দের জিনিস কিনে না দেওয়ার জন্য নয়। এই কিশোর বাবার সঙ্গে অভিমান করে ঘর ছেড়েছিলেন গানের জন্য। এরপর ঠাঁই নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে। সেখানে নিজের স্বপ্নকে লালন করেছেন। একসময় সাফল্য নিজে এসে ধরা দিয়েছে তাঁর কণ্ঠে। আজ (২ অক্টোবর) সেই কিশোরের জন্মদিন। তিনি দেশের তুমুল জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জেমস।
পারিবারিক নাম ফারুক মাহফুজ আনাম হলেও তিনি পরিচিত জেমস নামে। তবে ভালোবেসে ভক্তেরা তাঁকে ‘গুরু’ ডাকেন।
১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন জেমস, তবে বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। কিশোর বয়সেই প্রেমে পড়েছিলেন জেমস, সেটা গিটার আর গানের। তবে সরকারি কর্মচারী বাবার সেই প্রেমে মোটেও সাড়া ছিল না। খুব চেষ্টা করেও যখন বাবার কাছে এই প্রেমের সম্মতি পাওয়া গেল না, তখন ঘর ছাড়তে হয়েছিল জেমসকে।
জেমসের নতুন ঠিকানা হলো চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিং। সেখানে শুয়ে জেমস স্বপ্ন দেখতেন রকস্টার হওয়ার। তবে ঘর ছেড়ে আর স্বপ্ন দেখেই বসে ছিলেন না জেমস, আজিজ বোর্ডিংয়ে থেকে গড়ে তুলেছিলেন ব্যান্ডদল ‘ফিলিংস’। ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও ভোকাল হিসেবে তখনই কিছুটা জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন এই কিশোর।
এরপর ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন জেমস। পরের বছর প্রকাশ করেন নিজেদের প্রথম অ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’। এই অ্যালবাম তখন সাড়া না ফেললেও জেমসের কণ্ঠ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। ১৯৮৮ সালে ফিলিংসের দ্বিতীয় অ্যালবামের ‘জেল থেকে বলছি’ গান দিয়ে জনপ্রিয়তা পান জেমস।
পরে জেমস ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন ‘নগর বাউল’। এরপর সেই নগর বাউলের বাউল হয়ে জেমস বাংলা ব্যান্ড-সংগীতে সৃষ্টি করেছেন ইতিহাস। বাংলা ভাষায় প্রথম সাইকিডেলিক রক শুরুর পাশাপাশি জন্ম দিয়েছেন কালজয়ী বহু গানের। দেশের সীমান্ত ছাড়িয়ে খ্যাতি পেয়েছেন ভারতেও।
সময়টা ২০০৫; সিনেমা ‘গ্যাংস্টার’, গান ‘ভিগি ভিগি’। প্রথম বার বলিউডের সিনেমায় প্লেব্যাক করে তুমুল সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের শীর্ষ রক-তারকা ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস। ফলাফল ২০০৬ ও ২০০৭ সালে পরপর আরও তিন বলিউডের সিনেমায় কণ্ঠ দিয়েছেন।
তবে রকস্টার এই বলিউডযাত্রার বিরতি টেনেছেন ২০১৩ সালে ‘বেবাসি’ গান দিয়ে। কিন্তু কেন? এত বছরেও সেই প্রশ্নের জবাব দেননি জেমস।
২০২২ সালের এক আড্ডায় এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। জেমসের ভাষ্যে সেটা এমন, ‘বলিউডে তখন ক্যারিয়ার গড়তে পারতাম। খুব সহজ ছিল। কিন্তু সেখানে স্থায়ী হলে আমাকে বাংলাদেশটা ছাড়তে হতো। যেটা আমাকে দিয়ে সম্ভব নয়। আরও বড় প্রলোভন দিলেও দেশ আমি ছাড়তে প্রস্তুত নই। তাই আর বলিউডে কন্টিনিউ করা হয়নি।’
বাংলাদেশের পাশাপাশি বলিউড চলচ্চিত্র ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’র কিছু অংশে জেমসকে দেখা যায়, যেখানে তিনি একটি ব্যান্ডের সদস্য চরিত্র হিসেবে অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে ‘ওয়ার্নিং’ চলচ্চিত্রের ‘বেবাসি’ গানের ভিডিওচিত্রেও কাজ করেন জেমস, সেখানে তিনি নিজের গাওয়া গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গেও খুব জনপ্রিয় জেমস। সেই সূত্রে ২০০৪ সালে বাঙালি সংগীত পরিচালক প্রীতমের সঙ্গে মিলিত হন। ২০০৫ সালে বলিউডের ‘গ্যাংস্টার’ চলচ্চিত্রে তিনি প্লেব্যাক করেন।
জেমস ২০১৪ সালে ‘দেশা—দ্য লিডার’ চলচ্চিত্রের ‘দেশা আসছে’ গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০১৭ সালে ‘সত্তা’ সিনেমায় ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’ গানের জন্য ফের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান জেমস।
শুধু গান নয়, গিটার বাজানোতেও দারুণ পটু জেমস। করেছেন মডেলিংও। গানের মতো খ্যাতি রয়েছে ফটোগ্রাফার জেমসের। এর বাইরে জেমস রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট নামক একটি প্রডাকশন হাউস পরিচালনা করেন।