জেনে নিন ভালো ঘুমের জন্য পরীক্ষিত কৌশল
ঘুমের সময় মস্তিষ্ক স্মৃতি ও তথ্য সংরক্ষণ করে। দেহ ক্ষতিকর উপাদানগুলো সরিয়ে সব ঠিকঠাক করে দেয়। এতে জেগে ওঠার পরে শরীর আবার ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
আপনি ক্লান্ত, লম্বা একটা ঘুম দেওয়ার জন্য শুয়ে পড়লেন বিছানায়। কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসছে না। বহু লোকেই কোনো না কোনো সময় এ সমস্যায় ভোগেন। তবে কিছু কৌশল মেনে চললে কিন্তু সহজে এ সমস্যার সমাধান করা যায়।
বিবিসি বাংলার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানিয়েছে ভালো ঘুমের জন্য কিছু পরীক্ষিত কৌশল। আসুন জেনে নিই—
১. ভেবে দেখুন, আপনি কি সত্যি সত্যিই ক্লান্ত?
আসলেই বিছানায় যাওয়ার জন্য তৈরি হলে সহজেই ঘুম এসে যায়। তবে একজনের কাছে যেটি ‘স্বাভাবিক’ ঘুমানোর সময়, অন্য কেউ হয়তো সে সময় ঘুমাতে পারেন না। আপনার এ সমস্যা থাকলে দিনের বেলা যত বেশি সম্ভব প্রাকৃতিক আলোর মধ্যে কাটাতে চেষ্টা করুন এবং সেটা শুরু করুন ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই।
বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, এতে রাতজাগা লোকদের ‘দেহঘড়ি’কে আগেভাগে ঘুমানোর জন্য তৈরি করা যায়।
দিনের বেলা যথেষ্ট ব্যায়াম ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিছানায় যাওয়ার আগের চার ঘণ্টার মধ্যে ব্যায়াম না করলেই ভালো। কারণ, এতে শরীরে অ্যাড্রিনালিন হরমোন বের হয়। এতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
২. খাবারের প্রতি নজর রাখুন
প্রকৃতপক্ষে ভালো ঘুমের প্রক্রিয়া শুরু হয় বিছানায় যাওয়ার সময়ের অনেক আগে। তাই ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ছয় ঘণ্টা আগে থেকেই ক্যাফেইন রয়েছে এমন পানীয় পান করা বন্ধ করুন। ক্যাফেইন শরীরে অন্তত নয় ঘণ্টা থাকে। কাজেই ভালো করে ঘুমাতে চাইলে দুপুর ১২টার পর থেকেই চা, কফি ও কোমল পানীয়ের মতো ‘ফিজি ড্রিংকস’ পান বাদ দেওয়ার কথা ভাবুন।
অনেকেই খালি পেটে ঘুমাতে পারেন না। তবে একেবারে ভরপেট খেয়ে বিছানায় গেলেও ঘুমের অসুবিধা হতে পারে। ঘুমের সময়ের প্রায় চার ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। এ সময় ভারী গুরুপাক খাবার বা চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এতে ঘুম না হওয়া বা রাতে জেগে ওঠার সমস্যা কেটে যাবে।
৩. ঘুমের আগে শিথিল থাকতে কিছু করুন
বিছানায় যাওয়ার আগে আপনার দেহ ও মন চাপমুক্ত হবে এমন কাজ করুন। যেমন : হালকা গরম পানিতে গোসল, মেডিটেশন বা ধ্যান করা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা, ডায়েরি লেখা, বই পড়া বা আলো কমিয়ে দিয়ে গান শোনা।
৪. ঘুমের সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক ভুলে যাবেন না
ঘুমের জন্য আদর্শ পটভূমি তৈরি করতে হবে। প্রতিদিন একসময়ে ঘুমাতে যান, ঘুমের আগে চা বা কফি পান এড়িয়ে চলুন, ঘরে ঘুমের পরিবেশ তৈরির দিকে নজর দিন।
আমাদের শোবার ঘর কেবল ঘুমের জায়গাই হওয়া উচিত, অন্য কিছুর নয়। এ ক্ষেত্রে অন্ধকার, অতিরিক্ত গরম নয়, জিনিসপত্রে ঠাসা নয় এমন ঘর নির্বাচন করুন।
ঘুমের এক ঘণ্টা আগে থেকে টিভি-স্মার্টফোন থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। এগুলো থেকে যে নীল আলো ছড়ায়, তা আপনার মস্তিষ্ককে ঘুমাতে দেয় না। রেডিওতে কিছু শুনতে থাকলে স্লিপ টাইমার ব্যবহার করুন, যেন এটি নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধ হয়ে যায়।
৫. ঘুমকে অগ্রাধিকার দিন
কম ঘুমানো আপনার শারীর ও মনের ওপর বহু বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। রাতের পর রাত পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুম হলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ঘুম কম হলে আয়ু কমে।
প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং নিশ্চিত করুন যেন প্রতি রাতে আপনার সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম হয়। ছুটির দিনেও এ নিয়ম অনুসরণ করুন।