সুস্থ থাকার প্রস্তুতি নিন রোজার আগেই
আসছে রোজা, আর সুস্থভাবে রোজা রাখার প্রথম শর্তই হলো শারীরিক সুস্থতা। কেননা সুস্থ শরীরে সুন্দরভাবে রোজা সম্ভব। সুস্থভাবে রোজা রাখার জন্য তাই প্রস্তুতি নিতে হবে এখনই।
রোজার আগে প্রাপ্তবয়স্কদের কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে ভালো। কেননা অনেককেই দেখা যায় রোজার মাঝামাঝি সময়ে অসুস্থ হয়ে যেতে। যেমন, কিডনির খারাপ অবস্থায় অনেকে না জেনে রোজা রাখলে ক্রিয়েটিনিন অনেক সময় বেড়ে যেতে পারে। বিশেষ করে অনেকেই আছেন যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন এবং নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন তাঁদের বেলায়। তাই তাঁদের রোজা রাখার আগে ক্রিয়েটিনিন ও ইলেকট্রোলাইট চেক করানো উচিত।
যেসব রোগী কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোজা রাখবেন না। প্রয়োজনে রক্তের ইউরিক এসিড, সিবিসি, ক্রিয়েটিনিন, ইউরিয়া, ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা করে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
আবার অনেকেই আছেন যাঁরা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাঁদের অবশ্যই রোজা রাখার আগে চিকিৎসক ও ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা ইনসুলিনের ডোজ ঠিক করে নেওয়া, ওষুধের সময় ও পরিমাপ ঠিক করে নেওয়া, ক্যালরি অনুযায়ী খাদ্যের বরাদ্দ যথাযথভাবে বুঝে নিলে সুন্দর ও সুস্থভাবে রোজা সম্পন্ন করা যায়।
যাদের এসিডিটি বা গ্যাসট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তাদের রোজার আগে শারীরিক চেকআপ করাতে হবে, যেন রোজা রেখে শারীরিক সমস্যা না বেড়ে যায়।
যাঁরা সন্তানসম্ভবা, তাঁদেরও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখতে হবে। কোনো জটিল গর্ভাবস্থায় রোজা না রাখাই ভালো। এ ছাড়া যাদের ডায়াবেটিস, প্রেসার রয়েছে তাদের গর্ভাবস্থায় রোজা না রাখাই শ্রেয়।
স্বাভাবিক সন্তানসম্ভবা নারীর রোজা রাখার আগে রক্তের শর্করা পরীক্ষা করে নিলে ভালো।
যাঁরা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তাঁদের অবশ্যই রোজা রাখার আগে রক্তের সিবিসি, আয়রনের মাত্রা পরীক্ষা করে নিতে হবে। কেননা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম হলে রোজা রেখে অনেক দুর্বল হয়ে যেতে পারেন। তাই রোজার সময় প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট কম হলে রোজা রেখে অনেকে দুর্বল হয়ে যেতে পারেন। তাই রোজার সময় প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট যেমন, আয়রন ট্যাবলেট, ফলিক এসিড ইত্যাদি সেবনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
শারীরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি বাড়িতেও খাবারের প্রস্তুতি নিতে হবে। রোজার আগে কী ধরনের খাবার খাবেন তার পরিকল্পনা করে নেওয়া ভালো। একটু হিসাব করে রোজার আগে বাজার করলে সঠিকমতো খাওয়া সম্ভব। পরিবারের সদস্যসংখ্যা অনুযায়ী বাজার করলে বাড়তি খাবার থেকে যাবে না। তাই পুষ্টি বিবেচনায় সঠিক মানসম্পন্ন খাবার খেলে রোজার সময় স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। রোজার ৩০ দিনে রাতের খাবার, সেহরি ও ইফতারে স্বাস্থ্যকর খাবারের মেন্যু কী হতে পারে তা রোজার আগেই করে ফেললে ভালো।
তাই শারীরিক ও মানসিকভাবে রোজার আগেই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। সুস্থ শরীরে রোজা রাখা এবং রোজা রেখে সুস্থ থাকে দুটোই জরুরি।
তামান্না চৌধুরী : প্রধান পুষ্টিবিদ, অ্যাপোলো হাসপাতাল।
ক্যাপশন: রোজার আগেই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। ছবি : থ্রিভাল রুম