বিশ্ব রক্তদাতা দিবস : রক্তদান কেন ভালো?
আজ ১৪ জুন, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। যাঁরা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাচ্ছেন, তাঁদেরসহ সাধারণ জনগণকে রক্তদানে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দিবসটি পালন করা হয়।
শারীরিকভাবে সুস্থ ১৮ থেকে ৫৭ বছর বয়সের মধ্যে কোনো পুরুষ ও নারী রক্ত দিতে পারবে। এ ক্ষেত্র পুরুষের ওজন থাকতে হবে অন্তত ৪৮ কেজি এবং নারীর ওজন অন্তত ৪৫ কেজি। ১২০ দিন পর পর, অর্থাৎ চার মাস পর পর রক্ত দেওয়া যাবে।
রক্তদানে কোনো সমস্যা হয় না। কেননা, একজন মানুষের শরীরে সাড়ে চার থেকে ছয় লিটার রক্ত থাকে। রক্তদান করা হয় সাধারণত ২৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার। এটি শরীরে থাকা মোট রক্তের মাত্র অল্প ভাগ।
দেশে বছরে আট থেকে নয় লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা থাকে। রক্ত সংগ্রহ করা হয় ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ ব্যাগ। বাকি তিন লাখ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহের জন্য প্রয়োজন জনগণকে সচেতন করা।
মানবদেহে রক্তের প্রয়োজন কেন?
মানবদেহে রক্তের কাজ কোষের ভেতর অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে বর্জ্য পদার্থ ও কার্বন ডাইঅক্সাইড বের করা। এ ছাড়া হরমোন-এনজাইম জাতীয় উপাদান বহন, দেহের তাপ ও পানির সমতা সংরক্ষণ, এসিড-বেইসের ভারসাম্য রক্ষা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ ইত্যাদি।
রক্তদানের উপকার
১. একজনের দানকৃত রক্ত আরেকজন মানুষের জীবন বাঁচাবে।
২. রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বছরে তিনবার রক্তদান আপনার শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে নতুন কণিকা তৈরির হার বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত রক্তদান করলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
৩. গবেষণায় দেখা যায়, যাঁরা বছরে দুবার রক্ত দেন, অন্যদের তুলনায় তাঁদের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। বিশেষ করে ফুসফুস, লিভার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যানসারের ঝুঁকি নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্ষেত্রে অনেক কম দেখা গেছে।
৪. নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে নিজের শরীরে বড় কোনো রোগ আছে কি না, সেটি বিনা খরচে জানা যায়। যেমন : হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইচআইভি (এইডস) ইত্যাদি।
৫. রক্ত দিলে ৬৫০ ক্যালরি করে শক্তি খরচ হয়। অর্থাৎ ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
৬. রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকে পুণ্যের বা সওয়াবের কাজ। একজন মানুষের জীবন বাঁচানো সমগ্র মানবজাতির জীবন বাঁচানোর মতো মহান কাজ।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার।