মুখে সিসা দিলে কি তোতলামি সেরে যায়?
তোতলামির সমস্যা অনেকেরই রয়েছে। এ নিয়ে বিড়ম্বনাও অনেক। তাই তোতলামি থেকে পরিত্রাণ পেতে চান সবাই। তোতলামি দূর করার জন্য তোতলা লোকজন ঝাড়ফুঁক, তাবিজসহ অনেক কিছুই গ্রহণ করেন। এসব পদ্ধতিতে লাভ না হলেও শারীরিক কোনো ক্ষতি হয় না। হলে আর্থিক ক্ষতি হয়। তবে আমাদের দেশে গ্রামগঞ্জে-শহরে প্রায় সর্বত্রই অনেককে দেখা যায় তোতলামি থেকে সেরে ওঠার জন্য মুখে সিসা ব্যবহার করছেন। এই সিসা শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
তোতলামির জন্য সিসার ব্যবহার কীভাবে এসেছে, তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে সিসা ব্যবহারে তোতলামি সেরে গেছে বলে শোনা যায়নি। তারপরও মানুষ এটি ব্যবহার করছে। অথচ মুখে সিসা দেওয়া একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।
সিসা একটি ধাতব পদার্থ। ইংরেজিতে এর নাম ‘লেড’। সিসা বা লেড বিষ। তবে বিভিন্ন জিনিস প্রস্তুতের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার রয়েছে। চোখে ব্যবহৃত সুরমায় আছে লেড সালফাইড। লেড কার্বোনেট ব্যবহার হয় রং তৈরিতে। পেট্রলে থাকে টেট্রাইথাইল। এটি গাড়ির ইঞ্জিন ভালো রাখে। এ ছাড়া টাইপমেটাল, কেবলের ঢাকনা, পটারি গ্লেজ, খেলনা ইত্যাদি জিনিস তৈরিতে লেডের ব্যবহার রয়েছে। কাজেই লেডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইন্ডাস্ট্রিতে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কিছুটা স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তবে সাবধানতা অবলম্বনে তা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
সিসা বা লেড শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য কিংবা অন্য কিছুর সঙ্গে মুখ দিয়ে এবং ত্বক ও মিউকাস ঝিল্লির মধ্য দিয়ে শোষণের মাধ্যমে। আগেই বলেছি, সিসা বিষ। এটি দীর্ঘদিন মুখে বা জিহ্বার নিচে রাখলে সেটি থেকে সহজেই কিছুটা শরীরে শোষিত হয় এবং ধীরে ধীরে বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সিসার একটি নোনতা ধাতব স্বাদ রয়েছে। অনেকে ভাবেন, এতেই বুঝি কথা বলার জড়তা কেটে যাবে। আসলে ধারণাটি ঠিক নয়। সিসার বিষক্রিয়ায় প্রথমে শরীরের ছোট ছোট রক্তনালি সংকুচিত হয়। এতে দেখা দেয় মাথাব্যথা, হাত-পায়ের মাংসপেশি কামড়ানো, বমি ভাব, রক্তশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটব্যথা ইত্যাদি। সিসা শরীরে প্রবেশ করার পর তা মস্তিষ্ক ও প্রান্তীয় স্নায়ুদতন্ত্রে সঞ্চিত হয়ে মারাত্মক বিষক্রিয়া ঘটায়। এ ক্ষেত্রে চোখের পাতা ও হাত-পায়ের কাঁপুনি থেকে দৃষ্টিশক্তি লোপ, মতিভ্রম, প্যারালাইসিস উন্মাদনা ও স্থায়ী মানসিক বিকৃতি হয়ে থাকে। শরীরে ২০ থেকে ৩০ গ্রাম সিসা জমা হলে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে।
তোতলামির জন্য মুখে সিসা ব্যবহার করার কারণে প্রাথমিক অবস্থায় সিসার সঞ্চয় লক্ষ করা যায় দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থলে। দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থলে ও মাড়িতে এপাশ থেকে ওপাশ একটি নীলাভ রেখার মতো হয়ে সিসা জমাকৃত অবস্থায় থাকে। কাজেই মুখে সিসা দিয়ে তোতলামি সারে কি না, বিষয়টি পরীক্ষামূলকভাবে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, এটি একটি সর্বজনস্বীকৃত বিষ। এটি মুখে নিলে বিষক্রিয়া হবেই। তোতলামি সারাতে মুখে কেউ সিসা দেবেন না, সিসাতে তোতলামি সারবেও না।
তোতলামির মূল কারণ হচ্ছে মানসিক। এ ছাড়া নার্ভের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারণও থাকতে পারে। মানসিক কারণে হলে তার চিকিৎসা রয়েছে। এ জন্য ‘স্পিচ থেরাপি’ নিতে হয়। এ দেশেও সে ব্যবস্থা রয়েছে। এ পদ্ধতি একটি কোর্সের মতো প্রতিদিন অনুশীলন করতে হয়, একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর। নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ কিংবা মানসিক বিশেষজ্ঞরাও স্পিচ থেরাপি সম্পর্কে খোঁজখবর দিতে পারবেন। কাজেই সিসা ছেড়ে চিকিৎসা নিন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল