শীতের তিন সমস্যার সমাধান
শীত এলো বলে। হিমেল বাতাস দরজায় করাঘাত করছে, এখনো জেঁকে বসেনি। সতেজ সবজির পসরা বাজারে। শীতের কাপড় কেনার ধুম পড়েছে। কুয়াশার চাদর প্রতি সকালেই উঁকি দিচ্ছে। দিনে কিছুটা গরম, রাতে শীত।
ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। দিনে-রাতে তাপমাত্রার তারতম্য,বাতাসের শুষ্কতা, ফুলের রেণু, ধুলোবালি ইত্যাদির কারণে শীতে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসমস্যা হয়।
শীতের সময় হওয়া তিন ধরনের সমস্যা এবং এর সমাধানের বিষয়ে আসুন জানি।
১. ফ্লু ও সর্দিজ্বর
ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টায় তাপমাত্রার তারতম্যের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে শরীর কিছুটা নাজুক হয়ে পড়ে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হয় বেশি। কারণ, তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু কম থাকে। এই সুযোগে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসগুলো সহজেই আক্রমণ করতে পারে। ফ্লুতে আক্রান্ত হই আমরা। সর্দিজ্বর,কাশি,গলাব্যথা ফ্লুয়ের উপসর্গ।
ফ্লু হলে বিশ্রাম নেবেন এবং বেশি করে পানি পান করবেন। ফলের রস, বিশেষ করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ টক ফলের রস ফ্লুতে খুব কাজে দেয়। গলাব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গার্গল করতে পারেন । এই লবণ পানি গলার ব্যাক্টিরিয়াকে কুপোকাত করতে সাহায্য করে। মধু, তুলশী পাতা, বাসক পাতা, কালোজিরা বা আদা চা ভালো ঘরোয়া সমাধান। ১০ দিনের বেশি কাশি বা জ্বর থাকলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
২. সাইনুসাইটিস
শীতে সাইনুসাইটিসের প্রকোপ বাড়ে । খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলে এবং খোলা ময়দানে হালকা জগিং করলে সাইনুসাইটিসে উপকার মেলে। সাইনুসাইটিস রোধে ধুলোবালি থেকে দূরে থাকতে হবে। নাকবন্ধ, মাথাব্যথা, গা ব্যথা, মাথা ভারী এবং দুর্বল লাগা ইত্যাদি সাইনুসাইটিসের লক্ষণ। সাইনুসাইটিস হলে বাষ্প চিকিৎসা বা স্টিম ইনহেলেশন ভালো কাজে দেয়। মেন্থল দানা গরম পানিতে দিয়ে শ্বাস নিলে বন্ধ নাক খুলে যায়। এ সময় হালকা গরম পানিতে গোসল করলে ভালো। প্রয়োজনে ন্যাসাল ড্রপ, অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যান্টিবায়োটিক প্রভৃতি ওষুধ সাইনুসাইটিসে দেওয়া হয়।
৩. শ্বাসনালির অসুখ-বিসুখ
শীতে শ্বাসনালিতে সংক্রমণ হওয়া একটি খুব প্রচলিত সমস্যা। যাদের অ্যাজমা বা সিওপিডি রয়েছে, শীতে তাদের রোগের প্রোকোপ বাড়ে। শীতের শুষ্ক বাতাস, ঠান্ডা আবহাওয়া, ফুলের রেনু এসব রোগের প্রকোপ বাড়ায়। তাই শীতে এসবের জন্য বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। বাচ্চা ও শিশুদের জন্য বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ধুলোবালি, ঠান্ডা বাতাস থেকে দূরে থাকতে হবে। মাফলার, কান টুপি, প্রয়োজোনে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। গোসলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করবেন। যারা ইনহেলার ব্যবহার করেন তাঁরা নিয়মিত ব্যবহার করবেন। এই সময়ে ডাক্তারের চেম্বারে একবার ঘুরে এলে ভালো।
লেখক : রেসিডেন্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়