রোজায় দাঁত ও মুখের যত্নে করণীয়

রোজায় সারাদিন না খাওয়া এবং ঠিকমতো দাঁতের যত্ন না নেয়ার কারণে দাঁত ও মুখে বিভিন্ন সমস্যা হয়।
এই সময় দাঁত ও মুখের যত্নে করণীয় বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৯৯তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. গাজী শামীম হাসান। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল ফ্যাকাল্টির ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রশ্ন : রোজার কারণে মুখ ও দাঁতের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে?
উত্তর : রোজার মাসটা আমরা ভোররাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকি। এই জন্য অনেক ব্যবস্থাপনা করা যায় না। রোজার সময় পেস্ট দিয়ে ব্রাশ করাকে বিরত রাখার কথা বলা হয়।
রোজার সময় রাতে খাওয়ার পর দুই দাঁতের মাঝখানে যদি একটি মাংসের টুকরো থেকে যায়, পুরোটা দিন না খেয়ে থাকার জন্য পঁচে একটি দুর্গন্ধ তৈরি হয়। এই কারণে যদি আমরা রাতে খাওয়ার পর ফ্লসিং অথবা ইন্টারডেন্টাল ব্রাশ, এগুলো করে ধুয়ে ঘুমাই, তাহলে কিন্তু সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। ছোট বাঁকা কিছু ব্রাশ পাওয়া যায়, এই ব্রাশগুলো দিয়ে দাঁতের মাঝে মাঝে ব্রাশ করলে যেকোনো খাবারের টুকরো রয়ে যায়। ওপর থেকে যে ব্রাশ করি, এটি দিয়ে বের করা যায় না। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মুখের ভেতর দুর্গন্ধ নিয়ে। এই জন্য কেবল মাত্র ব্রাশ নয়, ফ্লসিং বা ইন্টারনেটাল ব্রাশ করে যদি কেউ ঘুমায়, তাহলে এই সমস্যা থেকে সে রক্ষা পাবে। সঙ্গে সঙ্গে একবারে শেষ পর্যায়ে একেবারে সেহরি শেষ করার আগে আমরা যদি মাউথ ওয়াশ দিয়ে কুলি করি, তাহলে মুখ একটু পরিষ্কার থাকে। আর দ্বিতীয় হলো দাঁতে যদি ব্যথা হয়, তাহলে রোজা থেকে ইফতার করা যাবে না।
প্রথম কথা হলো ব্যথা কেন দাঁতে হয়? সাধারণত কিন্তু ক্ষয় হলেও দাঁতে ব্যথা হয় না। দাঁতে ব্যথা তখনই হবে যখন তার পাল্প বা মজ্জায় ধরে যাবে। মজ্জায় ধরে যায় কখন, অনেক গভীর হয়ে গেলে। মজ্জায় যখন ধরে যায়, তখন স্বাভাবিক কনভেনশনাল ফিলিংয়ে কাজ হয় না, তখন একে রুট ক্যানেল করার প্রয়োজন পড়ে।
রোগীরা রোজার মাসে রুট ক্যানেল করতে গেলে সে জানে আমাকে একটি ইনজেকশন দিবে। রোজা রেখে ইনজেকশন দেয়া যাবে না, তাই কেউ ইনজেকশন দিতে চায় না। তবে এখানে একটি কথা রয়েছে, সেই ইনজেকশনটা পুশ করা যাবে না, যেটা শক্তি বর্ধক। তবে আমরা যে লোকাল এনেসথেসিয়া বলি, যেটি দিয়ে আমাদের দাঁতকে অবশ করে নিই। এটিতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়, এখানে কিন্তু শক্তি বর্ধক কিছু নেই। এ ধরনের ইনজেকশন দিলে সাধারণত রোজা নষ্ট হয় না। আর একটি বিষয় হলো রুট ক্যানেল যখন করি, তখন বলা হয় ব্লিডিং করা। রুট ক্যানেলের ভেতর দিয়ে কিন্তু রক্তপাত হয় না। সাধা্রণত গড়িয়ে যদি না পড়ে সেটি রুট ক্যানেলের সঙ্গে হয় না। এর মানে হলো এই সময় খুব কষ্ট না করে চিকিৎসা করে ফেলা উচিত।
দাঁতের ব্যথা কিন্তু খুব জটিল। বিশেষ করে পাল্পের ব্যথা। এই ব্যথা সহজে দূর করতে পারি। এটা যদি নাও হয়, লোকাল এনেসথেসিয়া দিয়ে অবশ করে লম্বা সময়ের জন্য কাজ করি, তাহলে তার ব্যথাতো রিলিফ হয়ে গেল। এরপর আমরা ইফতারি করতে পারি।
আরেকটি বিষয় হলো ওষুধ খাওয়ার বিষয়টা। আমাদের অনেক ব্যথার ওষুধ রয়েছে দিনে দুই বার খেলে হয়ে যায়। তাহলে একটা সেহরির পর আরেকটি ইফতারের পর যদি আমরা এভাবে ডোজটাকে ব্যবস্থাপনা করি, তাহলে এই সমস্যা থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।
প্রশ্ন : ভাজা-পোড়া খাবারে কি দাঁতের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : দেখুন, যেহেতু দীর্ঘ সময় ধরে খাওয়া দাওয়া করবো না তাই তেলের খাবার না খাওয়াইতো ভালো। অনেক সময় দেখবেন তৈলাক্ত খাবার যদি শেষ রাতে খাওয়া হয়, তাহলে ঢেকুর যেটি এটি হলে কিন্তু জ্বলতে থাকে। তখন কিন্তু পানীয় পান করা যায় না, কুলিও করা যায় না। এটা একটি বিব্রতকর অবস্থা। বিশেষ করে ভোররাতে এই ধরনের খাবারগুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত। যদিও আমরা ইফতারি করার সময় অনেক ভাজা-পোড়া খাই, তবে খালি পেটে এতোটা ভাজা-পোড়া খাবার খাওয়া কতটা উচিত। কিন্তু আমার মনে হয়, এখানে খুব সহজ খাবার খাওয়া ভালো।
প্রশ্ন : রোজা রাখা অবস্থায় কি মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে পারে?
উত্তর : এই ক্ষেত্রে আমি বলব যে এড়িয়ে যাওয়াটাই ভালো। মাউথওয়াশের মধ্যে কিছু কিছু উপাদান রয়েছে, এগুলোর মাধ্যমেও মুখের ভেতর একটি স্বাদ পাই। এই স্বাদ আপনি এড়িয়ে যেতে পারছেন না। এই জন্য হয়তো এড়িয়ে যাওয়াটাই উচিত হবে। এই জন্য ভোররাতে যেন ব্যবস্থাপনা করা যায় মুখ পরিষ্কারের বিষয়টি, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রশ্ন : ব্রাশ করার ক্ষেত্রে বিষয়টি কী?
উত্তর : ব্রাশ করার ক্ষেত্রে আমার মনে হয় কোনো অসুবিধা থাকার কথা নয়। কারণ, আপনি দেখেন, আমরা মেসওয়াক করতে পারি, ব্রাশ করার ক্ষেত্রে আপনি পেস্ট ব্যবহার করবেন না। কারণ, অনেক সময় পেস্টের মধ্যে এটি থাকে। স্বাভাবিক ব্রাশ ব্যবহার করলেতো আপনার এ ধরনের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। মেসওয়াক ও ব্রাশের মধ্যেতো আসলে তেমন কোনো পার্থক্য নেই, ব্রাশ করলে দুই দাঁতের মাঝখানে পরিষ্কার করা যায়। এটা মেস ওয়াক দিয়ে পরিষ্কার করা যায় না। এর জন্য আমরা ফ্লস ব্যবহার করার কথা বলি।
আমার পরামর্শ, আপনারা ব্রাশ ব্যবহার করবেন, তবে পেস্টটা এড়িয়ে যাবেন। পেস্টের যে একটি গন্ধযুক্ত বিষয় থাকে এটি মুখের মধ্যে যাবেই। একটু এড়িয়ে যাওয়া উচিত।
প্রশ্ন : অনেকের ক্ষেত্রে দাঁত ফেলাটা প্রয়োজন হতে পারে। এটি কখন করা উচিত বলে মনে করেন?
উত্তর : যদি একটি আক্কলে দাঁত ফেলতে যান, তাহলে অনেক রক্ত আসবে। দাঁত ফেলতে গেলে রক্তপাত হবে না, এটা বলা মুশকিল। জরুরিতো সব জায়গায় হতেই পারে, সেই ক্ষেত্রে ইনজেকশন দিয়ে যদি তার ব্যথাকে কমিয়ে দিতে পারি, রোজা খোলার পরে যদি সার্জারি করি, তাহলে কিন্তু পাঁচ ঘণ্টা কষ্ট না করে সার্জারি করতে পারি।