প্রকৃতি ও সুস্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে বিপাক প্রক্রিয়া

গুরুজনরা বলেন, সবুজ প্রকৃতির মধ্যে থাকলে মানুষের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং রোগ-ব্যাধি কম হয়। অনেক গবেষণায়ও এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। সবুজ প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতা, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ বিভিন্নরোগ কম দেখা যায়। তবে প্রকৃতি ও মানুষের সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কটি বরাবরই রহস্যময়। আর যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের দাবি বিপাক প্রক্রিয়াই প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানুষের সুস্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েসের একদল গবেষক মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রকৃতির প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন। সুস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ নিয়ে করা শতাধিক গবেষণার তথ্য নিয়ে এই গবেষণা পরিচালিত হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েসের গবেষক মিং কুয়ো। এ সংক্রান্ত গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশ করেছে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘ফ্রন্টিয়ারস অব সাইকোলজি’।
সায়েন্স ডেইলিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গবেষক মিং কুয়ো বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানুষের সুস্বাস্থ্যের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে হওয়া প্রায় সব গবেষণা প্রতিবেদনই জোগাড় করা হয়। এসব গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে, এমন সম্পর্কের ২১টি সম্ভাব্য কারণ পাওয়া যায়। দেখা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের হৃদপিণ্ড ও রক্ত সংবহনতন্ত্র, ফুসফুস ও শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া, মানসিক স্বাস্থ্য এবং পেশি ও হাড়ের মধ্যকার সংযোগ সুস্থ রাখায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ২১টি সম্ভাব্য কারণ নিয়ে যাচাই-বাছাইয়ে শেষ পর্যন্ত টেকে মাত্র একটিই। এটি হলো মানুষের বিপাক প্রক্রিয়া।
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, শরীর রোগ হওয়া ও রোগ প্রতিরোধ দুটি ক্ষেত্রেই বড় ভূমিকা রাখে মানুষের বিপাক প্রক্রিয়া। আবার অনেক গবেষণায় এটি প্রমাণিত, বিপাক প্রক্রিয়াকে সুস্থ রাখে প্রাকৃতিক পরিবেশ।
গবেষকরা বলেন, প্রকৃতির মধ্যে থাকলে মানুষের শরীরে বিশেষ অবস্থা দেখা যায়। এই অবস্থাকে ‘বিশ্রাম ও পরিপাক’ বলা চলে। নগরজীবনের যান্ত্রিকতায় ‘কাজ আর কাজের’ ঠিক উল্টো অবস্থা এটি। ‘বিশ্রাম ও পরিপাক’ অবস্থা মানুষের শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ার জন্য সহায়ক। আর বিপাক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে শরীরও ভালো থাকে।
গবেষক কুয়ো বলেন,প্রকৃতির মধ্যে থাকলে মানুষের শরীরে প্রশান্তি দেখা যায় এবং মানুষের শরীরের বৃদ্ধি, প্রজনন ও বিপাক প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে কাজ করে।
চার দেয়ালের মধ্যে থেকেও তো মানসিক প্রশান্তিতে থাকা সম্ভব। তবে প্রকৃতিতে যাওয়া কেন। এ প্রসঙ্গে গবেষক কুয়ো বলেন, নগরজীবনেও মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি সম্ভব হলেও শরীরে জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া অসম্ভব। শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশই শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় এসব উপাদান নিশ্চিত করে।