শীতে কি শিশুকে গোসল করানো বারণ?
‘ওরে বাবা, শীতে বাচ্চার গোসল করালে তো ঠান্ডায় সর্দিজ্বর হয়ে কাহিল হয়ে যাবে সোনামণি’- এমন ধারণা অনেকেরই। আসলে কিন্তু ঠান্ডার কারণে বাচ্চাদের সর্দিজ্বর হয় না; হয় বিভিন্ন ভাইরাস ও জীবাণুর কারণে। শীতে এসব জীবাণুর প্রকোপ বেড়ে যায়। এ থেকে রক্ষা পেতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জরুরি। আর পরিচ্ছন্ন থাকতে হলে গোসল তো করাতেই হবে। তা না হলে যে উল্টো সর্দিকাশিই বেড়ে যাবে। অবশ্য বাচ্চাকে প্রতিদিন যে গোসল করাতে হবে তা নয়, শীতে একদিন পরপর গোসল করালেই চলবে।
অনেকে জন্মের পরই বাচ্চাকে গোসল করাতে চান, আবার অনেকে মনে করেন, চুল কাটার পর কিংবা নাভি পড়ার পর গোসল করানো ভালো। তবে নিয়ম হলো সুস্থ-স্বাভাবিক বাচ্চাদের জন্মের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর গোসল করানো। এর আগে গোসল করানো উচিত নয়। শীতকালে নবজাতককে কিন্তু ঘন ঘন গোসল না করালেও চলে। এ সময় মলত্যাগ ও প্রস্রাবের পর শিশুকে ভালোভাবে পরিষ্কার রাখা চাই। ছোট শিশুদের গোসল করানোর আগে রুমের তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে। বাথরুমে ঠান্ডা একটু বেশি থাকে। এ কারণে খুব ছোট শিশুদের ওখানে নয়, বরং বেডরুমে দরজা-জানালা বন্ধ করে বাথটাব বা কোনো গামলায় বাচ্চাকে গোসল করান।
গোসলের আগে যিনি গোসল করাবেন, তাঁর হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। গোসলের জন্য আগে থেকেই বাথটাবে হালকা গরম পানি তৈরি রাখুন। আরেকবার চেক করে নিন পানি যেন বেশি গরম না থাকে। গোসলের আগে শিশুর কাপড়চোপড় খুলে, মলমূত্র থাকলে তা পরিষ্কার করে তারপর শিশুকে বাথটাবে নামাতে হবে। গোসলের পানিতে সামান্য ডেটল বা স্যাভলন দিতে পারেন। নাভি যাতে না ভিজে যায়, এই বিষয়টি মাথায় রাখুন। মনে রাখবেন, বাচ্চাকে প্রথমবার পানির সংস্পর্শে আনছেন- তাই সে কিছুটা অসুবিধা বোধ করতেই পারে। অনেক নবজাতকই এ সময় কেঁদে ওঠে। বাচ্চাকে তাই ধীরে ধীরে পানির সংস্পর্শে আনুন। কিছুক্ষণ পরেই বাচ্চা পানির সঙ্গে মানিয়ে নেবে। তবে বেশি কান্না করলে পানি থেকে উঠিয়ে নিন। শিশুর জন্য বিশেষভাবে তৈরি কম ক্ষারযুক্ত সাবান, শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। সাবান কেনার সময় তার পিএইচ লেভেল দেখে নিন। এই লেভেল সাতের নিচে থাকলেই ভালো। অনেককেই দেখা যায় গোসলের আগে বাচ্চার শরীরে মাখার জন্য হন্যে হয়ে খাঁটি সর্ষের তেল খুঁজছেন। আসলে গোসলের আগে শিশুর গায়ে তেল মাখলে তেমন ক্ষতি নেই, তেমনি তেল মাখলে শিশুর শরীর সবল থাকবে বা হাড় শক্ত হবে বলে যে মনে করা হয়- এটিও ভুল ধারণা। আর গরমে তেল না মাখানোই উচিত।
গোসলের সময় শিশুর কান, বগল, উরুর ফাঁক, কানের পেছনটা কোমল কাপড় দিয়ে আলতো করে ঘষে দিতে হবে। প্রথম কয়েকদিন মাথায় পানি না দিয়ে নরম কাপড় দিয়ে মুছে দিতে পারেন। পায়খানা-প্রস্রাবের রাস্তা খুব ভালো করে ধুতে হবে। তবে সব সময় খেয়াল রাখবেন নাকে-কানে যেন পানি না ঢোকে। চার-পাঁচ মিনিটে গোসলের পর্ব শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে শরীরটা মুছে কাপড় পরিয়ে দেবেন। টাওয়েল বা পোশাক আগে থেকে বাথটাবের পাশে রাখবেন। গোসল করানোর পর এসব খুঁজতে যাবেন না। তাহলে বাচ্চার ঠান্ডা লাগতে পারে। সেই সঙ্গে শিশুর পরিধেয় বস্ত্রও আগে থেকে তৈরি রাখতে হবে। গোসল করানো শেষে বাচ্চাকে বাথটাব থেকে উঠিয়ে নেওয়ার সময় খুব সাবধান থাকতে হবে। এ সময় আপনার হাতে সাবান বা শ্যাম্পু লেগে থাকলে হাত পিছলে বাচ্চা পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আসলে গোসল করানোর পুরো প্রক্রিয়াটাতেই নিরবচ্ছিন্ন মনোযোগ প্রয়োজন। তাই অনেকে মিলে হৈ চৈ না করে যে কোনো একজন গোসল করানোর দায়িত্ব পালন করুন।
লেখক : রেজিস্ট্রার ( শিশু বিভাগ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল