বিষণ্ণ হৃদরোগীর মৃত্যুঝুঁকি পাঁচগুণ বেশি
হৃদরোগীদের মধ্যে বিষণ্ণতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের মৃত্যুঝুঁকি পাঁচগুণ বেশি। আর হৃদরোগী কিন্তু বিষণ্ণতায় ভোগেন না এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি ৮০ শতাংশ কম। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার এক বছরের মধ্যে এই ঝুঁকি ও শঙ্কা দেখা যায়। তাই চিকিৎসকের পাশাপাশি হৃদরোগীদের নিয়মিত মেনে চলতে হবে মনোবিদদের পরামর্শ। যুক্তরাজ্যের গবেষকরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন ও ইউনিভার্সিটি অব হালের একদল গবেষক হৃদরোগ ও বিষণ্ণতার সঙ্গে মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাস-বৃদ্ধির সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন। এতে নেতৃত্ব দেন দুটি প্রতিষ্ঠানের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জন ক্লিল্যান্ড। সম্প্রতি স্পেনে ‘ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব কার্ডিওলজির’ এক সম্মেলনে তাঁদের গবেষণা নিবন্ধটি উপস্থাপন করা হয়।
গবেষক জন ক্লিল্যান্ড বলেন, পরীক্ষায় দেখা গেছে, হৃদরোগে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার এক বছরের মধ্যে মৃত্যু হওয়া রোগীদের অধিকাংশই বিষণ্ণতায় ভুগেছেন। তবে এক বছর পর মৃত্যু ঘটনা হৃদরোগীর মধ্যেও বিষণ্ণতায় ভোগার নজির আছে।
গবেষক জন ক্লিল্যান্ড আরো বলেন, যুক্তরাজ্যের হাসপাতালে ভার্তি হওয়াদের একটি বড় অংশই হৃদরোগী। আর এসব রোগীর মধ্যে ২৫ শতাংশকেই বিভিন্ন কারণে এক মাসের ব্যবধানে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হৃদরোগের চিকিৎসা নেওয়া অধিকাংশ রোগীই এক বছরের মধ্যে দু-একবার পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি হন। আর পুনঃভর্তি হওয়া এসব হৃদরোগীর প্রায় অর্ধেক মারা যান।
গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদরোগে চিকিৎসা নেওয়ার পর প্রায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ রোগীই বিষণ্ণতায় ভোগেন। বিষণ্ণতায় ভোগা রোগীদের মধ্যে উদ্যমহীনতা, প্রাত্যহিক কাজে আগ্রহ হারানো, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা দেখা যায়। এসব বিষয় থেকেই বিষণ্ণতা ও মৃত্যুর ঝুঁকির সম্পর্ক পাওয়া যায়।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা হৃদরোগীদের বিষণ্ণতা কাটাতে ওষুধ দিয়ে থাকেন। তবে গবেষক জন ক্লিল্যান্ড এর বিরোধী। তাঁর মতে, বিষণ্ণতায় ভোগা হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এমন রোগীদের চিকিৎসার শুরুতেই ওষুধ না দিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞর কাছে পাঠানো উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্ণতা কাটানোর ওষুধ হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে তেমন কাজ করে না। বরং মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের উপদেশে ভালো ফল পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ট ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ সেবিকা জুলি ওয়ার্ড বলেন, হৃদরোগীদের পাঁচভাগের একভাগ বিষণ্ণতায় ভোগেন। এর কারণে তাঁদের স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়ে। তাঁর মতে, হৃদরোগীদের সুস্থ করে তুলতে হলে হাসপাতালের চিকিৎসার পাশাপাশি মনোবিদদের পরামর্শও দিতে হবে।