শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হলে কী কী সমস্যা হয়
আমাদের শরীর ও মাংসপেশীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো প্রোটিন। মাংসপেশীর পাশাপাশি আমাদের ত্বক, উৎসেচক ও হরমোন তৈরি করতেও সাহায্য করে এই উপাদান। প্রোটিনের অভাবে শরীরের নানান সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হলে একাধিক সমস্যায় ভুগতে পারেন আপনি। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া না করলে, মেন্যুতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার না রাখলে, আপনার শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা যাবে। এর ফলে একাধিক গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন আপনি। তাই শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি রয়েছে কী না, সে বিষয় জেনে রাখা উচিত
চুল, ত্বক এবং নখের গঠনে সমস্যা
শরীর প্রোটিনের ঘাটতি হলে আপনার চুলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে। চুল ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। চুল পড়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। প্রোটিনের ঘাটতি ত্বকের সমস্যাও তৈরি করতে পারে। এর পাশাপাশি ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে আপনার নখ। পাতলা হয়ে যায় নখের গঠন।
প্রোটিনের ঘাটতি হলে কমতে পারে কর্মক্ষমতা
প্রোটিন আমাদের এনার্জির জোগান দেয়। সারাদিন কাজের শক্তি জোগায়। স্ট্যামিনা অর্থাৎ কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে। প্রোটিনের ঘাটতি হলে এগুলো হবে না। শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে আপনি সারাক্ষণ ঝিমিয়ে থাকবেন। ক্লান্ত-অবসন্ন লাগবে। স্বল্প পরিশ্রমেই দুর্বল হয়ে পড়বেন আপনি।
হাড় এবং পেশীর গঠনে ক্ষয়
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার না খেলে আপনার হাড়ের গঠন ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও পেশীর ক্ষয় হতে পারে। অতএব সময় থাকতেই সতর্ক হয়ে যাওয়া জরুরি। হাড়ের গঠন ভঙ্গুর হয়ে গেলে দ্রুত আপনার হাড় ক্ষয়ে যাবে। সামান্য চোট-আঘাতেই সহজে ফ্র্যাকচার হওয়ার প্রবণতা দেখা যাবে। অর্থাৎ হাড় ভেঙে যেতে পারে।
সর্বক্ষণ খিদে খিদে ভাব
প্রোটিন জাতীয় খাবার অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরতি রাখে। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রোটিন শরীরে না গেলে খিদে পাওয়াটা স্বাভাবিক। বার এই খিদেটা যদি কোনো প্রসেসড ফুড বা জাঙ্ক ফুড দিয়ে মেটানো হয়, তা হলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। হজমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ওজন হ্রাস করতে চাইলে হাই প্রোটিন খাদ্য তালিকার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু শরীরে প্রোটিনের অভাব হলে খিদে বেড়ে যায়।
দুর্বল হতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
প্রোটিনের সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার। প্রোটিনের ঘাটতি হলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমতে থাকে। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ক্রমশ কমতে থাকলে সহজেই অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন আপনি। একাধিক রোগ বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। সহজে ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
রক্তে শর্করার ভারসাম্যহীনতা
ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি। প্রোটিনের অভাব রক্তে শর্করার মাত্রায় স্ফীতি ঘটাতে পারে। ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য ডাল, রাজমা, মাছ, ডিম, বাদাম ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রোজের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত
পেশিতে জোর না পাওয়া
পেশি গঠনে ও মজবুত করতে সাহায্য করে প্রোটিন। তাই বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, যাঁরা বডি বিল্ডিং করেন বা মাসল বিল্ডিং করেন, তাঁরা প্রোটিন জুস (Protein Shake) বা শেক খেয়ে থাকে। যদি শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি থাকে, তা হলে পেশিতে জোর থাকবে না। কোনো ভারী জিনিস তুলতে সমস্যা দেখা দিতে
চোখ এবং হাত ফুলে যাওয়া
প্রোটিনের অভাবে দেহে ফোলাভাব তৈরি হতে পারে। আর এই সমস্যা থেকেই লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। প্রোটিন শরীরে নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে। আর তাই প্রোটিনের অভাবে শরীরে পানি জমতে শুরু করে, যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যেতে শুরু করে। বিশেষত চোখ এবং হাতে ফোলাভাব বেশি নজরে পড়ে। এ ছাড়া অ্যানিমিয়াও হতে পারে। অ্যানিমিয়া এমন একটি রোগ যেখানে শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে লাল রক্ত কণিকা তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। প্রোটিন কম খাওয়া হলে শরীরের নানা জায়গা ফুলে যায়। একে ইডিমাও বলা হয় থাকে। যে অঙ্গগুলো বেশি ফোলে সেগুলো হলো– হাত, পা, পায়ের পাতা, পেট। এর একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হলো– রক্তের মধ্যে সংবহন হওয়া প্রোটিন, বিশেষত অ্যালবুমিন আমাদের টিস্যুতে তরল জমতে দেয় না। ফলে প্রোটিনের ঘাটতি হলেই এই পানি জমার প্রবণতা বেড়ে যায়।
ক্ষত শুকাতে দেরি হলে
প্রোটিন ত্বকের যেকোনো ক্ষতস্থান দ্রুত সারাতে সাহায্য করে। তবে অনেকদিন ধরে কোনো ক্ষত যদি না শুকায় সেক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব রয়েছে।
ক্লান্তি ভাব
প্রোটিন শরীর চনমনে রাখতে সাহায্য করে। প্রোটিনের ঘাটতি শরীরে একটা ক্লান্তি ভাব এনে দেয়।
লেখক : ডা. মো কামরুজ্জামান কামরুল, সহযোগী অধ্যাপক পালমোনোলজি বিভাগ; বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট।