কোন পথে যাবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/01/20/trump-russia.jpg)
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণে একটি বিষয় বারবার সামনে আসছে, আর তা হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কেমন হতে যাচ্ছে? রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতা এবং তার আগের প্রশাসনের বিভিন্ন নীতিমালার প্রেক্ষিতে অনেকেই শঙ্কা করছেন, তার অভিষেক এই যুদ্ধের গতিপথে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তার প্রশাসন রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপে ধীরগতি দেখানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক হয়েছিল।
একাধিক ঘটনায় ট্রাম্প পুতিনের প্রশংসা করেছেন। এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অভিযোগকে অগ্রাহ্য করেছেন। ইউক্রেন ইস্যুতেও তিনি একটি অস্বচ্ছ নীতি গ্রহণ করেছিলেন। ২০১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিলম্বিত করার অভিযোগ ওঠে, যা পরবর্তীতে তার অভিশংসনের একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর যুদ্ধ এক নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধে শক্তিশালী সমর্থন দিয়েছে। এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে।
তবে ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের কারণে এই যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন নীতিমালায় বড় পরিবর্তন আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি করিয়ে যুদ্ধ বন্ধ করবেন। যদিও তিনি কীভাবে এই লক্ষ্য অর্জন করবেন, তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এখনও প্রকাশ করেননি।
তবে মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্পের পুনরায় ক্ষমতায় আসা ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থনে ঘাটতি আনতে পারে। ট্রাম্পের রাশিয়া-প্রীতি এবং পুতিনের সঙ্গে তার অতীতের ঘনিষ্ঠতা ইঙ্গিত দেয়, তিনি হয়তো রাশিয়ার প্রতি নমনীয় মনোভাব বজায় রাখবেন। এর ফলে ইউক্রেনের প্রতিরোধ শক্তি দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ট্রাম্পের আগের মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি মূলত "আমেরিকা ফার্স্ট" দর্শনের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়েছিল, যেখানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার চেয়ে অভ্যন্তরীণ স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ট্রাম্প যদি এই নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন, তাহলে ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা কমিয়ে দেওয়া হতে পারে। এর ফলে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে।
এদিকে, ট্রাম্পের অভিষেক ইতোমধ্যে ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। ইউরোপের নেতারা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউক্রেনকে দেওয়া সহায়তা কমিয়ে দেয়, তবে ন্যাটোর ঐক্য দুর্বল হতে পারে।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/very_big_1/public/images/2025/01/20/trump-russia-inner.jpg)
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, তার কূটনৈতিক দক্ষতা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত বন্ধ করতে সহায়ক হবে। তবে শান্তি চুক্তি যদি ইউক্রেনের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার সঙ্গে আপস করে হয়, তাহলে তা এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের সম্ভাব্য পদক্ষেপ রাশিয়াকে আরও উৎসাহিত করতে পারে, বিশেষত যদি মার্কিন সামরিক সহায়তা হ্রাস পায়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইতোমধ্যে স্পষ্ট করেছেন যে, ইউক্রেন তার সার্বভৌমত্ব এবং ভূখণ্ডের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস করবে না।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তার নীতিমালা এই সংকটকে হয় শান্তির পথে নিয়ে যেতে পারে, নয়তো আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। ভবিষ্যতই প্রমাণ করবে ট্রাম্প এই সংকট মোকাবিলায় কী ধরনের সমাধান বের করেন।