দুধ মস্তিষ্কের জন্যও ভালো
বহুকাল ধরে আমরা জানি, দুধ প্রোটিনের ভালো উৎস। এটি স্বাস্থ্যকর হাড় তৈরিতে সাহায্য করে। শিশুদের বৃদ্ধির সময় প্রাথমিক এবং প্রধান খাদ্য হিসেবে দুধকে ধরা হয়। তবে যখন আমরা পূর্ণ বয়স্ক হই, তখন যেন দুধ তার গুরুত্ব হারায়। শিশু বয়সে দুধ খেলেও বড় হওয়ার পর দুধ খাওয়া যেন একদমই ভুলে যাই আমরা। সম্প্রতি একটি গবেষণায় বলা হয়, দুধ প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে এই তথ্য।
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব ক্যানসাস মেডিক্যাল সেন্টারের একদল গবেষক গবেষণা কাজটি পরিচালনা করেন। গবেষণার ফলাফল প্রকাশ হয় যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, দুধ খাওয়ার সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কে স্বাভাবিকভাবে তৈরি হওয়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গ্লুটাথায়নের সম্পর্ক রয়েছে। দুধ খাওয়া মস্তিষ্কের কাজকে তরান্বিত করতে কাজ করে।
কেইউ মেডিক্যাল সেন্টারের ডায়াবেটিস ও নিউট্রিশন বিভাগের চেয়ারমান এবং গবেষণাটির সহ-লেখক ডেভরা সুলিভান জানান, ‘আমরা জানি, দুধ হাড়ের গঠন এবং পেশির গঠনের জন্য কার্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে, দুধ মস্তিষ্কের জন্যও সমানভাবে কাজ করে।
গবেষণাটিতে অংশ নেন ৬০ জন। তাঁদের খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন দুধ রাখা হয়। এরপর মস্তিষ্কেৱর স্ক্যান করা হয়। সেখানে গ্লুটাথায়নের লেভেল পরীক্ষা করা হয়। গ্লুটাথায়ন হলো মস্তিষ্কের একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
গবেষণায় দেখা যায়, দুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কে গ্লুটাথায়নের পরিমাণ বেড়ে যায়। গ্লুটাথায়ন মস্তিষ্কের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিহত করে এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিপাকীয় প্রক্রিয়ার সময় প্রতিক্রিয়াশীল রাসায়সিক যৌগ থেকে মস্তিষ্কের যে ক্ষতি হয়, তা প্রতিহত করতে কাজ করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের ফলে মস্তিষ্কের আলঝেইমার, পারকিনসন ইত্যাদি রোগ হয়। নিয়মিত দুধ খাওয়া স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও কাজ করে।
‘দুধ না খাওয়ার ফলে গাড়িতে যেমন জং ধরে, মস্তিষ্কেও তেমনি জং ধরে যায়; মস্তিষ্ক আর ঠিকমতো কাজ করে না। এর ফলে একপর্যায়ে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়’ বলে জানান ড. সুলিভান। তাই প্রতিদিন তিন কাপ দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, দুধ খাওয়ার ফলে গ্লুটাথায়নের নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়; যা বয়স্কদের জন্য খুবই ভালো।
গবেষণাটির আরেকজন সহ-লেখক ইন-ইয়ং চই বলেন, যদি আপনি দুধ খাওয়াকে আপনার দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যাভ্যাসে পরিণত করতে পারেন, তাহলে এটি মস্তিষ্কের বড় সমস্যাগুলো প্রতিহত করতে দারুণভাবে কাজ করবে। তবে শারীরিক অন্য কোনো সমস্যা থাকলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ সাপেক্ষেই দুধ পান করা ভালো।