ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রাপ্তিও অনেক

২০৮ রানের বড় ব্যবধানে হার। দুই ইনিংস মিলিয়েও প্রথম ইনিংসে ভারতের করা ৬৮৭ রান পেরোতে পারেনি বাংলাদেশ। পরিসংখ্যানগুলো হতাশাজনকই বটে। কিন্তু প্রথমবারের মতো ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলতে নেমে বাংলাদেশের প্রাপ্তির ঝুলিটাও খুব একটা কম নয়। টেস্টটা পঞ্চম দিন পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ যেভাবে লড়াই করেছে, তা নিশ্চিতভাবেই আশা জাগানোর মতো ব্যাপার।
প্রথম ইনিংসে বিরাট কোহলির দ্বিশতক আর মুরলি বিজয়, ঋদ্ধিমান সাহার শতকে ভর করে ভারত গড়েছিল ৬৮৭ রানের পাহাড়। ম্যাচটাও বাংলাদেশের হাত থেকে ফসকে গিয়েছিল অনেকটাই। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ফলোঅনও এড়াতে পারেনি মুশফিক বাহিনী। অলআউট হয়েছিল ৩৮৮ রানে। তবে বাংলাদেশকে ফলোঅন না করিয়ে আবার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করেছিল ভারত। স্কোরবোর্ডে ১৫৯ রান জমা করেই ইতি টেনেছিল দ্বিতীয় ইনিংসের। ফলে বাংলাদেশের সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছিল ৪৫৯ রান।
জিততে হলে তাই রেকর্ডই গড়তে হতো বাংলাদেশকে। ভারতের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে এতগুলো রান করা যে কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না, তা বলাই বাহুল্য। ম্যাচটা ড্র করতে পারলেও সেটা হতো জয়েরই সমান। সেই লক্ষ্যের দিকেও কিন্তু অনেকখানিই এগিয়ে গিয়েছিলেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা।
বাংলাদেশের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তাসকিন আহমেদ যখন সাজঘরে ফিরছেন, তখন দিনের খেলার বাকি ছিল মাত্র ২৫ ওভার। শেষটা তাই কিছুটা আক্ষেপ হয়েই থেমে গেছে বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য। ইশ! আর কিছুক্ষণ যদি ব্যাট করতে পারতেন সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ! তাইজুল ইসলাম যদি সেই সর্বনাশা ঝড়ো ব্যাটিং শুরু না করতেন! এই আফসোসগুলো আওড়াতে আওড়াতেই হয়তো টেলিভিশনের পর্দার সামনে থেকে উঠেছেন অনেকে।
তবে এর মধ্যেও বাংলাদেশ যে লড়াইটা করেছে, তাতে মুশফিকদের নিয়ে গর্ব করার অনেক জায়গা আছে। ২০০০ সালের পর থেকে ভারতের মাটিতে চতুর্থ ইনিংসে মাত্র একবারই দেখা গেছে ১০০ ওভার ব্যাটিং করতে। ২০০৩ সালে সেটা করেছিল নিউজিল্যান্ড। আহমেদাবাদে সেই টেস্টটা ড্র-ও করেছিল স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের দল। তারপর বাংলাদেশই চতুর্থ ইনিংসে খেলতে পেরেছে ১০০ ওভার। প্রথম ইনিংসেও বাংলাদেশ ব্যাটিং করেছিল ১২৭ ওভার।
ভারত সফরে দেখা গেছে দারুণ কিছু ব্যক্তিগত অর্জনও। বাংলাদেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে তিন হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন অধিনায়ক মুশফিক। প্রথম ইনিংসে খেলেছেন ১২৭ রানের লড়াকু ইনিংস।
টেস্টে অনেক দিন ধরেই নিষ্প্রভ হয়ে থাকা মাহমুদউল্লাহ আবার ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বরূপে ফেরার। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৪ রানের ইনিংসটি এসেছে তাঁরই ব্যাট থেকে।
ভারত সফরে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাপ্তি ব্যাটসম্যান মেহেদী হাসান মিরাজকে খুঁজে পাওয়া। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট সিরিজে দুর্দান্ত বোলিং করে নিজেকে বোলার হিসেবে ভালোভাবেই চিনিয়েছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাবেক অধিনায়ক। কিন্তু ব্যাটসম্যান মিরাজকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না কিছুতেই। সেটাই পাওয়া গেল হায়দরাবাদ টেস্টে। প্রথম ইনিংসে অসাধারণ ব্যাটিং করে মিরাজ খেলেছিলেন ৫১ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসেও তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৬১ বলে ২৩ রানের লড়াকু ইনিংস।
বাংলাদেশের আগে ভারত সফরে গিয়ে ইংল্যান্ড সিরিজ হেরেছিল ৪-০ ব্যবধানে। এর মধ্যে দুটি ছিল ইনিংস ব্যবধানের হার। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ভারতের সামনে টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল যেভাবে নাকাল হয়েছিল, সেই তুলনায় অনেক ভালোই খেলেছেন মুশফিক-সাকিবরা। আরো বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ পেলে বাংলাদেশ যে সমীহ জাগানোর মতো শক্তি হয়ে উঠবে, সেই আশা তো তাই করাই যায়।