মায়ামি-পিএসজি ম্যাচ : আজ গুরু-শিষ্যের ঐতিহাসিক লড়াই

এ লড়াইটা নিজের বিরুদ্ধে নিজের, ফেলে আসা প্রেমের, ইতিহাসের একটি আবেগী অধ্যায়ের কিংবা গুরু বনাম শিষ্যের- যেকোনো ভাবেই বলা যায়। কারণ ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে আজ রোববার (২৯ জুন) মুখোমুখি হচ্ছে লিওনলে মেসির সাবেক ক্লাব পিএসজি এবং বর্তমান ক্লাব ইন্টার মায়ামি। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার মার্সিডিজ-বেঞ্জ স্টেডিয়ামে হবে ম্যাচটি।
ম্যাচটির আরেকটি বিশেষত্ব হলো- মেসি মাঠে নামছেন তার সাবেক গুরুর বিপক্ষে। বার্সেলোনায় থাকতে যার অধীনে জিতেছিলেন ট্রেবল। শুধু মেসিই নয়, ইন্টার মায়ামির কোচ হাভিয়ের মাসচেরানো, ফুটবলার লুইস সুয়ারেস, সার্জিও বুস্কেটস ও জর্দি আলবা- সবাই এক সময় পিএসজির বর্তমান কোচ লুইস এনরিকে’র অধীনে বার্সেলোনায় খেলেছেন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে এই দলটি এনরিকে’র কোচিংয়ে ট্রেবল জয় করেছিল।
লুইস এনরিকের সঙ্গে সম্পর্কটা আরেক পাশে রাখলেও পিএসজির সঙ্গে মেসির সম্পর্ক প্রেম আর বিষাদের। ২০২১ সালে বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে নাম লিখিয়েছিলেন মেসি। প্যারিসের ক্লাবটিতে ছিলেন দুই বছর। পিএসজিতে মেসির সময়টা কেটেছে ভিন্ন দুই স্মৃতিতে। মেসি পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পরে তাকে বরণ করে নেওয়া, তার সঙ্গে দলটির সমর্থকদের ভালোবাসা ছিল অন্যরকম। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেটি তলানিতে গিয়ে ঠেকে। শুরুতে মেসির নামে স্লোগান তোলা সমর্থকরা, শেষে এসে দুয়ো ধ্বনি দিতে একটুও কার্পন্য করেনি।
মেসির অতি প্রেম আর তেতো বিচ্ছেদের পেছনের কারণ হলো- প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারা। পিএসজি লিওনেল মেসিকে দলে ভিড়িয়েছিল মূলত একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ের জন্য। কিন্তু সেসময় সেটা পূরণ হয়নি। তাই যারপরনাই হতাশ হয়েছিলেন তারা। সেই হাতাশা যে, এখনও কাটেনি সেটা স্পষ্ট হয়, গত পরশু মায়ামির বিপক্ষে ম্যাচের আগে ফরাসি পত্রিকা লে’কিপের একটি শিরোনামে, ‘সবকিছু ক্ষমা করে দেওয়া হয়নি।’ মেসি নিজেও হৃদয়ভাঙা সেই তেতো স্বাদ মেসি পিএসজি ছাড়ার পরও ভোলেননি। ইন্টার মায়ামিতে নাম লেখানোর পর একবার তিনি বলেছিলেন, ‘প্যারিসে আমি দুটি বছর মোটেই উপভোগ করিনি।’
পুরনো সেই আবেগ থাকলেও মাঠের খেলায় আর কোনো বন্ধুত্ব থাকে না। ম্যাচের আগে মায়ামি ডিফেন্ডার আলাবা তেমনটাই জানালেন, ‘মাঠে নামলে আমরা আর বন্ধু থাকি না, আমরা লড়াই করব এবং জেতার চেষ্টা করব। এটাই ফুটবল।’
ম্যাচটি নিয়ে ইন্টার মায়ামির কোচ মাসচেরানোর আবেগ অন্যরকম। তিনি বলেন, ‘এটা শুধু আমাদের জন্য নয়, বরং পুরো মেজর লিগ সকারের জন্য একটি ঐতিহাসিক রাত। আমরা বিশ্বের সেরা ১৬ দলের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছি, এটা এমএলএসের জন্য গর্বের।’
দুই দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যান
পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত দুই ক্লাবের মধ্যে কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হয়নি। অর্থাৎ এটিই হবে তাদের প্রথম দেখা। দুই দলই তাদের সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে, তবে পিএসজি কাগজে-কলমে স্পষ্ট ফেভারিট। সদ্যই ইউরোপ সেরার মঞ্চ ‘চ্যাম্পিয়ন্স লিগ’ জিতে এসেছে পিএসজি। তারপরও ক্লাব বিশ্বকাপ সবসময়ই চমকের মঞ্চ, যেখানে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে।
দুই দলের গ্রুপ পর্বের লড়াই
ইন্টার মায়ামি গ্রুপ ‘এ’ থেকে দ্বিতীয় হয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আল আহলির বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে মায়ামি। এরপর অবশ্য দ্বিতীয় ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ায় তারা। পর্তুগিজ ক্লাব পোর্তোকে হারায় ২-১ গোলে। শেষ ম্যাচে ব্রাজিলের ক্লাব পালমেইরাসের সঙ্গে ড্র করে ২-২ গোলে।
অন্যদিকে, ‘বি’ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোতে এসেছে পিএসজি। যদিও তাদের শুরুটা হয়েছিল হার দিয়ে। প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব বোটাফোগোর বিপক্ষে হেরেছিল ১-০ গোলে। এরপরই অবশ্য দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। দ্বিতীয় ম্যাচে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪-০ এবং শেষ ম্যাচে সিয়াটল সাউন্ডার্সের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে নকআউট পর্বে পা রাখে তারা।