যে কারণে টেস্ট ক্রিকেট ছেড়েছিলেন রোহিত
ভারতীয় ক্রিকেট দলের মারকুটে ওপেনার রোহিত শর্মা। একবার উইকেটে থিতু হতে পারলে তিনি ঠিকভাবেই জানেন যে কীভাবে বোলারদের শাসন করতে হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে দীর্ঘ সংস্করণ টেস্ট কিংবা সবচেয়ে ছোট টি-টোয়েন্টি, ভারতীয় এই ওপেনারের ব্যাট হাতে দাপটটা যেনো কখনোই কমেনি। কিন্তু সম্প্রতি ইংল্যান্ড সফরের আগে আচমকাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংক্ষিপ্ত বার্তায় অবসরের ঘোষণা দেন। তিনমাস পর গতকাল সোমবার (২৫ আগস্ট) একটি অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে এর কারণ জানালেন রোহিত।
রোহিত শর্মা আধুনিক ক্রিকেটের খুব কম খেলোয়াড়দের একজন, যিনি বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি তিন ফরম্যাটেই সফল। তিনি নিজেকে টি২০, ওয়ানডে ও টেস্টে ভারতের অন্যতম তারকা খেলোয়াড় ও নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার তিন মাস পরে রোহিত শর্মা জানান, এই সংস্করণে মানসিক ও শারীরিক চাপ অনেক বেশি থাকে। তিনি জানান, টেস্ট ক্রিকেট মানসিকভাবে কঠিন ও ক্লান্তিকর। ভালো প্রস্তুতিই তাকে এসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে সাহায্য করেছে।
টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে আসার পেছনে চাপই কি মূল কারণ ছিল? এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিলেও, তিনি সোমবার একটি প্যানেল আলোচনায় তার লাল বলের ক্রিকেট জীবন নিয়ে কথা বলেছেন।
রোহিত তার ক্যারিয়ারে ৬৭টি টেস্টে ৪০.৫৮ গড়ে ৪৩০১ রান করেছেন। এমন ধারাবাহিকতা ধরে রাখা নিয়ে রোহিত বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে সফল হতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলা এবং অনেক পরিশ্রমের মাধ্যমে আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। টেস্ট ক্রিকেট দীর্ঘস্থায়িত্ব চায়। পাঁচ দিন ধরে খেলা চালিয়ে যেতে হয়। মানসিকভাবে এটি খুবই চ্যালেঞ্জিং ও ক্লান্তিকর।’
তিনি ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামো, বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটকে তার শক্তির মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। রোহিত বলেন, ‘মুম্বইয়ে ক্লাব ক্রিকেটও দুই-তিন দিন ধরে হয়। ছোটবেলা থেকেই আমরা দীর্ঘ সংস্করণ এবং কঠিন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হই।’
৩৮ বছর বয়সী রোহিত আরও জানান, ক্রিকেটের শুরুতে তিনি শুধু খেলা উপভোগ করতেন এবং প্রস্তুতির গুরুত্ব বুঝতে পারতেন না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সিনিয়র খেলোয়াড় ও কোচদের সঙ্গে মেশার মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারেন যে প্রস্তুতিই ক্রিকেটের মূল শৃঙ্খলা এবং টেস্ট ক্রিকেটে সফলতার চাবিকাঠি।
২০২৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক রোহিত আরো জানান, মাঠে যেকোনো সাফল্যের পেছনে থাকে অনেক সময়ের পরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রম। তার মতে ম্যাচের সকল সিদ্ধান্ত এবং অসাধারণ মুহূর্তগুলো নির্ভর করে শুরুর আগের প্রস্তুতির ওপর। এই বিষয়ে রোহিত বলেন, ‘ম্যাচ শুরুর আগে অনেক সময় চলে যায় প্রস্তুতিতে। কারণ একবার খেলা শুরু হলে, তখন সবই নির্ভর করে প্রতিক্রিয়ার ওপর। সেটি হতে পারে চাপ সামলানো, ম্যাচের পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানো, ব্যাট বা বল হাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।’
রোহিত আরও বলেন, ‘ম্যাচ চলাকালীন আপনি প্রস্তুতি নিতে পারেন না’ সেটা আগেই করতে হয়, যাতে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আপনি সঠিকভাবে সাড়া দিতে পারেন।’
রোহিত টেস্ট ক্রিকেটে মানসিক সতেজতার গুরুত্বও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘যখন আপনি সর্বোচ্চ স্তরে সেরাটা দিতে চান, তখন মানসিক সতেজতা খুবই দরকার। মনোযোগই হয় মূল চাবিকাঠি। আর সেই সতেজতা আসে শুধু প্রস্তুতির মাধ্যমে সবকিছু শুরু হয় সেখান থেকেই।’
২০১৯ সালে টেস্টে ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে আসার পর রোহিতের ক্রিকেট জীবনে বড় পরিবর্তন আসে। যদিও প্রথম দিকে কিছু সমস্যা হয়, পরে তিনি ভারতের অন্যতম সফল টেস্ট ওপেনার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন, বিশেষ করে দেশের মাঠে।
রোহিত শর্মার শেষ কথা ছিল, ‘হোক সেটা খেলাধুলা বা জীবন, প্রস্তুতি হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ এটি একটি সহজ অথচ শক্তিশালী মন্ত্র, যা কেবল ক্রিকেট নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

স্পোর্টস ডেস্ক