ভারতকে তাদের মাটিতে তিন দিনে হারাল দক্ষিণ আফ্রিকা
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা এবার আরো একটি দূর্দান্ত ম্যাচ উপহার দিল। চোকার্স তকমা পাওয়া দলটি টেম্বা বাভুমার নেতৃত্বে লাল বলের ক্রিকেটে নিজেদের চেহারা যেন বদলে ফেলেছে। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে তিন দিনেই ভারতকে হারিয়েছে প্রোটিয়ারা। এতে ১৫ বছর পর ভারতের মাটিতে জয়ের দেখা পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
আজ রোববার (১৬ নভেম্বর) দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ১২৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯৩ রানে অলআউট হয়ে যায় ভারত। এতে ৩০ রানে জয় তুলে নিয়েছে প্রোটিয়ারা।
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে করেছিল ১৫৯, ভারত ১৮৯। দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ১৫৩ ও ভারতের ৯৩। চার ইনিংসেই অলআউট হয়েছে দুদল।
টেম্বা বাভুমা এদিন যেন ভিন্নরকম এক পরিকল্পনা সাজিয়েই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। যেটিকে নিছক বোকামিও বলতে পারেন কেউ কেউ। কিন্তু তার এই সাহসিকতাই তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে।
জয় থেকে মাত্র ৪৭ রান দূরে ভারত, হাতে তিন উইকেট। অধিনায়ক গিল চোট নিয়ে হাসপাতালে। আর্থাৎ আর দুটি উইকেট তুলে নিলেই প্রোটিয়াদের জয় নিশ্চিত।
উইকেটে তখন অক্ষর প্যাটেল ও জসপ্রীত বুমরাহ। অক্ষর যে কোনো মূহর্তেই ম্যাচ বের করে আনতে পারেন, প্রেটিয়ারাও সেটি জানেন। এমন সময় বাঁহাতি ব্যাটার অক্ষরের সামনে বাঁহাতি স্পিনার কেশভ মহারাজকে আনলেন বাভুমা।
অক্ষরও সেটিকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে প্রথম চার বলে ২ ছক্কা ও ১ চারে করলেন ১৬ রান। অনেকেই বাভুমার সিদ্ধান্তকে ভুল মনে করেন তখন, এমনকি ধারাভাষ্যকক্ষেও প্রশ্ন ওঠে এই নিয়ে।
কিন্তু ওভারের পঞ্চম বলে দেখা গেল চমক। এবার ছক্কা মারতে গিয়ে বাভুমার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন অক্ষর। এরপর ওভারের শেষ বলে শূন্য রানে মোহাম্মদ সিরাজকেও ফেরালেন মহারাজ। এরপরই উল্লাসে মেতে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়রা, যে উল্লাস ১৫ বছর পর ভারতকে তাদের মাটিতে হারানোর।
টেস্টে অধিনায়ক হিসেবে বাভুমা যেন অপ্রতিরোধ্য। ১১টি ম্যাচে নেতৃত্বে দিয়ে জিতেছেন ১০টিতে, আর একটি শেষ হয়েছে ড্রয়ে। কলকাতা টেস্টেও= তার নেতৃত্বের সঙ্গে ব্যাটিং অবদানও ছিল দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস ভরাডুবির মুখে পড়লেও চার নম্বরে নেমে তিনি ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন। দলের সংগ্রহ ১৫৩ রানে পৌঁছে দেন। যা গড়ে দেয় পার্থক্য।
বল হাতে দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও নিজের সক্ষমতা দেখালেন দক্ষিণ আফ্রিকা স্পিনার সাইমন হারমার। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও তুলে নেন ৪ উইকেট। ধ্রুব জুরেল, ঋষভ পন্ত ও রবীন্দ্র জাদেজার গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে ভারতীয় মিডল অর্ডার ভেঙে দেন তিনি। এমন পারফরম্যান্সের পুরস্কারও পেয়েছেন ম্যাচসেরা হয়ে।
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে দুই ওপেনার যশস্বী জাইসওয়াল ও লোকেশ রাহুলকে সাজঘরে ফেরান পেসার মার্কো ইয়ানসেন। এরপর পার্টটাইম স্পিনে দারুণ ভূমিকা রাখেন এইডেন মার্করাম, ৩১ রান করা ওয়াশিংটন সুন্দরকে ফিরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু এনে দেন। আর শেষদিকে জয় এনে দিয়েছেন মহারাজ।
দেশের মাটিতে এত কম রানের লক্ষ্যে ভারত আগে কখনো হারেনি। এর আগে এর চেয়ে ছোট লক্ষ্যে তাদের হার আছে—১৯৯৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্রিজটাউনে। সেবার ১২০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে ব্যর্থ হয়েছিল তারা।
দক্ষিণ আফ্রিকা এর আগে মাত্র একবার এর চেয়ে কম লক্ষ্য ডিফেন্ড করে জিতেছিল। ১৯৯৪ সালে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১২০ রানের টার্গেট ডিফেন্ড করে জয় তুলে নেয় প্রোটিয়ারা।
এই ম্যাচ ভারতের মাটিতে আরও একটি রেকর্ড হয়েছে, চার ইনিংসেই কোনো দলই ২০০ রানের ঘর ছুঁতে পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে করেছিল ১৫৯, ভারত ১৮৯। দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ১৫৩ ও ভারতের ৯৩।

স্পোর্টস ডেস্ক