দ.আফ্রিকার কাছে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হার ভারতের
আগেরদিনই জয়ের সুভাস পাচ্ছিল সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা। মাথার ওপর পাহাড়সম রান নিয়ে স্বাগতিক ভারত কতটা লড়াই করতে পারে সেটিই দেখার অপেক্ষা ছিল। রিশাভ পান্তের দল আজ বেশি সময় প্রোটিয়াদের অপেক্ষা বাড়াতে পারেনি। গুয়াহাটি টেস্টের শেষদিনে ৫০ ওভারও খেলতে পারেনি ভারত। ৪০৮ রানের ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
আজ বুধবার (২৬ নভেম্বর) গুয়াহাটি টেস্ট জিততে শেষ ইনিংসে ভারতের সামনে লক্ষ্য ছিল ৫৪৯ রানের। সেই লক্ষ্য তাড়ায় নেমে রান পাহাড়ে চাপা পড়ে পিষ্ট হয়েছে ভারত, গুটিয়ে গেছে ১৪০ রানেই। এতে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জিতে ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করল প্রোটিয়ারা।
২৫ বছর পর টেস্টে ভারতের বিপক্ষে এমন জয় পেলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এর আগে সর্বশেষ ২০০০ সালে হ্যান্সি ক্রনিয়ের অধীনে ভারতের মাটিতে কোনো টেস্ট সিরিজ জিতেছিল প্রোটিয়ারা।
একই সঙ্গে লজ্জার রেকর্ড গড়েছে ভারতও। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার দেখল ভারত। এর আগে ২০০৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৪২ রানের হার এতদিন রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় হার ছিল ভারতের।
ভারতকে জিততে হলে শেষ ইনিংসে অসম্ভব কিছু করতে হতো। কারণ ভারত ব্যাট করতে নেমে চতুর্থ দিন খেলেছিল মোটে ১৫.৫ ওভার। শেষ বিকেলে ২ উইকেট হারিয়ে ২৭ রান তুলতে পেরেছিল ভারত। শেষদিনে তাদের সামনে লক্ষ্য ছিল ৫২২ রান। এর আগে এমন লক্ষ্য কেউ পূরণ করতে পারেনি।
এমন অবস্থায় ভারতের লক্ষ্য ছিল জয়ের চিন্তা না করে অন্তত ড্র করে হোয়াইটওয়াশ এড়ানো। কিন্তু সিমন হারমারের স্পিন ঘূর্ণিতে সেই আশা আশাই থেকে গেল ভারতের জন্য। পঞ্চম দিনে দুই সেশনও ঠিকমতো খেলতে পারেনি স্বাগতিকরা।
আজ ২ উইকেটে ২৭ রান নিয়ে খেলতে নামে ভারত। অপরাজিত ছিলেন দুই ব্যাটার সাই সুদার্শান (২)* ও নাইটওয়াচম্যান কুলদিপ যাদব (৪)*। প্রথম সেশনে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন এই দুজন। কাটিয়ে দেন সেশনের প্রায় অর্ধেকটা সময়।
দিনের অষ্টম ওভারে জোড়া আঘাত হেনে ভারতের বিপর্যের শুরুটা করেন হার্মার। ইনিংসের ২৩তম ওভারে ফেরান ৫ রান করা কুলদীপ যাদব আর ২ রান করা ধ্রুব জুরেলকে। এরপর রিশাভ পান্তকেও বেশি সময় উইকেটে স্থায়ী হতে দেননি হার্মার। ভারতীয় অধিনায়ক ফেরেন ১৬ বলে ১৩ রান করে।
এরপর রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন সুদার্শন। ষষ্ঠ উইকেটে যোগ করেন ৯৯ বলে ৩৭ রান। প্রথম সেশন শেষে ১৩৮ বলে ১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন সুদর্শন। আর ৪০ বলে ২৩ রানে টিকে ছিলেন জাদেজা।
চা বিরতি থেকে ফেরার পর আর সুদার্শনকে সুযোগ দেয়নি প্রোটিয়ারা। দ্বিতীয় সেশনের পঞ্চম বলেই সুদার্শনকে ফিরিয়ে এই জুটি ভেঙে দেন সেনুরান মুথুসামি। তার বলে এজ হয়ে এইডেন মার্করামকে ক্যাচ দেন সুদর্শন। ১৩৯ বলে ১৪ রানে ফেরেন তিনি।
সুদার্শন ফিরলে ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে আরেকটি আশা জাগানিয়া জুটি গড়ার চেষ্টায় ছিলেন জাদেজা। ৭৭ বলের এই জুটি ভাঙলে ভারতের সব আশার বাতি নিভে যায়। এই কাজটাও করেন হার্মারই। ৪৪ বলে ১৬ রান করা ওয়াশিংটন সুন্দরকেও মার্করামের ক্যাচ বানান তিনি। পূরণ করে নেন ফাইফার।
সুন্দরের এই ক্যাচ নিয়ে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান মার্করাম। এক টেস্ট ম্যাচে সর্বোচ্চ ৯টি ক্যাচ নিয়ে ছাড়িয়ে যান ২০১৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভারতীয় ক্রিকেটার আজিঙ্কা রাহানের গড়া কীর্তিকে।
পরের ওভারে এসে নিজে ষষ্ঠ শিকার ধরেন হার্মার। এবার ফেরান নিতিশ রেড্ডিকে। কাইল ভেরেইন্নার ক্যাচ হন ভারতীয় ব্যাটার।
বাকিদের এই যাওয়া-আসার ভিড়ে একপ্রান্ত আগলে রেখে ইনিংসের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন জাদেজা। তবে এরপর আর বেশি সময় টিকতে পারেননি তিনি। কেশব মহারাজের বলে ফেরেন তিনি।
ওভারের পঞ্চম বলে মোহাম্মদ সিরাজকে ফিরিয়ে ভারতের ইনিংসের ইতি টেনে দেন মহারাজ। ভারত গুটিয়ে যায় ১৪০ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস : ১৫১.১ ওভারে ৪৮৯/১০
ভারত ১ম ইনিংস : ৮৩.৫ ওভারে ২০১/১০
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস : ৭৮.৩ ওভারে ২৬০/৫ ডিক্লেয়ার
ভারত ২য় ইনিংস : ৬৩.৫ ওভারে ১৪০/১০ (জয়সওয়াল ১৩, রাহুল ৬, সুদার্শান ২১৬, কুলদিপ ৫, জুরেল ২, রিশাভ ১৩, জাদেজা ৫৪, ওয়াশিংটন ১৬, নিতিশ ০, সিরাজ ০, বুমরাহ ১*; ইয়ানসেন ১৫-৭-২৩-১, মুল্ডার ৪-১-৬-০, হার্মার ২৩-৬-৩৭-৬, মহারাজ ১২.৫-১-৩৭-২, সেনুরান ৭-১-২১-১)
ফলাফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৪০৮ রানে জয়ী।
সিরিজ : ২ ম্যাচ সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা ২-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : মার্কো ইয়ানসেন।
সিরিজ সেরা : সিমন হার্মার।

স্পোর্টস ডেস্ক