চট্টগ্রামে এসে কঠিন রোগে আক্রান্ত হন তিলক— কী হয়েছিল সেসময়?
সর্বশেষ এশিয়া কাপে ভারতের শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক তিলক ভার্মা। ব্যাটহাতে দারুণ একটি ইনিংস খেলে দলকে শিরোপা এনে দেয়ছিলেন তিনি। কিন্তু নায়ক তো দূরে থাক, জীবন নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছিল এই ভারতীয় ব্যাটারের। সেটি অবশ্য এশিয়া কাপে নয়, বাংলাদেশ সফরে থাকাকালীন। সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় সেই গল্প শুনিয়েছেন তিলক।
২০২২ সালে ভারত ‘এ’ দলের হয়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তিলক। চারদিনের সেই ম্যাচটি ছিল চট্টগ্রামে। ব্যাটহাতে মাঠেও নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু বেশি সময় উইকেটে থাকতে পারেননি তিনি। হাতের আঙ্গুল নাড়াতে পারছিলেন না তিলক। তার ভাষায়, নিজেকে তখন পাথর মনে হচ্ছিল।
তিলক সেসময় আক্রান্ত হয়েছিলেন র্যাবডোমায়োলাইসিস নামের অসুখে। ২২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের পেশির সেই তীব্র যন্ত্রণা প্রাণঘাতীও হতে পারত, যদি তখন ঠিকমতো চিকিৎসা না নিতেন। তিলকের এই অসুখ বাংলাদেশে এসে ধরা পড়লেও এর শুরুটা ছিল মূলত আরও আগে থেকেই।
তিলক বলেন, ‘আইপিএলে প্রথমবার খেলার পর কিছু শারীরিক সমস্যা বোধ করছিলাম। আমি সবসময় ফিট থাকতে চাইতাম, কিন্তু হচ্ছিল না। এরপর এই অসুখ ধরা পড়ে- যার কারণে শরীরের পেশিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। তখন আমি টেস্টের স্বপ্নে বিভোর। 'এ' দলের হয়ে খেলছি, নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছি। তখনই সমস্যা এসে হাজির।'
সেই ম্যাচে ৩৩ রানে থাকাকালে ক্রিজ ছেড়ে যান তিলক। কিন্তু মাঠ ছেড়ে বেড়িয়ে গিয়ে নিজের গ্লাভসটাও খুলতে পারছিলেন না তিনি। কিন্তু বিরল এই অসুখের কারণ কী? তিলকের ভাষায়, অতিরিক্ত ফিট হওয়ার নেশাই তার এই অসুখ ডেকে এনেছিল।
ভারতীয় ব্যাটার তিলক বলেন, 'আমি সবসময় ভাবতাম ফিটনেস কীভাবে আরও ভালো করা যায়। ছুটির দিনও জিমে যেতাম। আমার লক্ষ্য ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ফিট খেলোয়াড় আর দুর্দান্ত একজন ফিল্ডার হওয়া। শুরুর দিকে তাই অসুবিধা হলেও পাত্তা দেইনি। তখন আইস বাথ নিতাম। কিন্তু শরীরকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেইনি। যত বেশি সম্ভব পরিশ্রম করতাম, এতে পেশির ওপর মারাত্মক চাপ পড়ত।'
আগে পাত্তা না দিলেও বাংলাদেশে এসে আর সহ্য করতে পারছিলেন না তিলক। প্রকট আকার ধারণ করে তার সেই অসুখ। সেই সময়ের বর্ণনা দিয়ে ভারতীয় এই তারকা বলেন, ‘বাংলাদেশে 'এ' দলের হয়ে সিরিজ খেলতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি। হঠাৎ দেখলাম আঙুলগুলো ঠিকমতো নাড়াতে পারছি না। নিজেকে মনে হচ্ছিল পাথর। মাঠ থেকে উঠে গেলাম। আঙুল এত শক্ত হলো যে, গ্লাভস খোলা যাচ্ছে না। গ্লাভস লেটে খুলতে হয়েছে। পেশি এত শক্ত হয়েছিল যে, আইভি লাইনের সুঁইও ঢুকছিল না।’
জীবনের কঠিন সেই মুহূর্তে তিলক পাশে পেয়েছিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অন্যতম কর্ণধার আকাশ আম্বানিকে। তিনিই তিলকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তিলক বলেন, ‘ঐ কঠিন সময়ে আকাশ আম্বানিকে পাশে পাই। অসুস্থ হওয়ার পরপরই তার ফোন পাই। উনি বিসিসিআইয়ের সাথে কথা বলেন। জয় শাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ। সাথে সাথে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, কয়েক ঘণ্টা দেরি হলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে পারত।’

স্পোর্টস ডেস্ক