হারের পর ফুটবলারদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন বাটলারের
নারী ফুটবলে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মুলমঞ্চে খেলবে বাংলাদেশ। আগামী বছরের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় বসবে এই আসর। সেখানে অবশ্য কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে ঋতুপর্না চাকমা-আফঈদা খন্দকারদের। মুলমঞ্চে কঠিন গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ। সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন কোচ পিটার বাটলার। সেজন্য থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে তার দল।
দুই ম্যাচের খেলায় আজ শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) ছিল প্রথম ম্যাচ। সেখানে অবশ্য ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৩-০ গোলে হেরেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এই হার নিয়ে অবশ্য খুব বেশি প্রশ্ন তোলার কিছু নেই। কারণ র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৫১ ধাপ এগিয়ে থাইল্যান্ড।
হার নিয়ে প্রশ্ন না তোলা গেলেও কোচ বাটলার প্রশ্ন তুলেছেন কিছু ফুটবলারের মানসিকতা নিয়ে আর স্বাগতিক থাইল্যান্ডের আয়োজন নিয়ে। দুই দলের এই প্রীতি ম্যাচটি ছিল ফিফা টায়ার-১ এর। কিন্তু বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের এই ম্যাচটি খেলা হয়েছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। যেটি নিয়ে বেজায় চটেছেন বাটলার।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের ইংলিশ কোচ বাটলার বলেন, ‘আমি জানি না আদৌ এটি টায়ার-১ প্রীতি ম্যাচ ছিল কিনা। কারণ আমরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে এমন পরিবেশে খেলেছি, যেখানে আলোর মাত্রা অতোটা ভালো ছিল না (ম্যাচ খেলার মতো)।’
এরপরই বাটলারের ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে ফুটবলারদের ওপর। তার মতে, কিছু খেলোয়াড় সঠিক মনোভাব নিয়ে জাতীয় দলে খেলতে আসেনি। বাটলার বলেন, ‘কয়েকজন ফুটবলার ভুল মানসিকতা নিয়ে মাঠে নেমেছে, এমন অমনোযোগী মনোভাব আমি কিছুতেই সহ্য করব না। কেউ যদি আমার দলে খেলতে চায়, দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চায়, তাহলে এমন মানসিকতা নিয়ে আসতে পারবে না যা জাতীয় দলের সঙ্গে মানানসই নয়।’
থাইল্যান্ডের বিপক্ষে এই ম্যাচটিকে জাতীয় দলের ম্যাচের মতোই মনে হয়নি বাটলারের। বাংলাদেশের এই ইংলিশ কোচ বলেন, ‘ম্যাচটি জাতীয় দলের ম্যাচের মতো মনে হয়নি। এটা এমন একটি ম্যাচের মতো মনে হয়েছিল, যেখানে উন্নতি দরকার। আমি মনে করি, আমরা যখন এমন ম্যাচ আয়োজন করি, তখন আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে সবকিছু সঠিকভাবে হচ্ছে।’
হার-জিতের বাইরে এ ম্যাচে ইতিবাচক অনেক কিছু পেয়েছেন বাটলার। এমন ম্যাচগুলোতে শেখার সুযোগ গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য তার। শিখতে যাওয়া সেই তরুণদের প্রশংসা করে বাটলার বলেন, ‘আমরা অনেক তরুণ মেয়েকে সুযোগ দিয়েছি— শিখা, নবিরন, জয়নব, সাগরিকা, মুনকি। রিপা, হালিমাদেরও আমরা সুযোগ দিয়েছি। আমি এমন খেলোয়াড়দের খেলাতে আনন্দ পাই যারা পরিচিত নাম নয়, কিন্তু সঠিক মনোভাব নিয়ে আসে।’
পরক্ষণেই বাটলার যেন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যই করলেন। তিনি বলেন, ‘যারা কঠোর পরিশ্রম করতে চায় এবং নিজেকে উন্নত করতে চায়, তাদের আমি খেলতে দেব। যারা আমাকে পরীক্ষা করতে চায়, করুক। আগেও হয়েছে এবং আবার হলে আমি দৃঢ় থাকব। আমি কখনোই অসম্মান বা খারাপ আচরণ সহ্য করব না।’
ঠিক কাদের উদ্দেশ্য করে এমন মন্তব্য করলেন নারী দলের কোচ বাটলার, সেই সমীকরণ মেলাতে হলে একটু পেছনে তাকাতে হবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন ১৮ জন নারী ফুটবলার। এর মধ্যে কয়েকজনকে আবারো জাতীয় দলে ডেকেছিলেন বাটলার।
সেই বিদ্রোহী ফুটবলারদের মধ্যে আজ একাদশে ছিলেন ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা, রুপনা চাকমা, তহুরা খাতুন, শামসুন্নহার জুনিয়র-সিনিয়র, মারিয়া মান্দারা। ম্যাচের মধ্যে কোচ পরিবর্তন আনেন তহুরা, অধিনায়ক আফিদা, ঋতুপর্ণা, শামসুন্নাহার, শিউলি আজিমদের। তাদের পরিবর্তে মাঠে নামান সাগরিকা, রিপা, হালিমা, জয়নব বিবি, নবিরন ও শিখাকে।

স্পোর্টস ডেস্ক