ভারতের বিপক্ষে ২২ বছরের অপেক্ষা ঘোচাতে কাল মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ–ভারত ম্যাচ মানেই বাড়তি উত্তেজনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর মর্যাদার লড়াই। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে দুই দলেরই বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেলেও প্রতিবেশি দুই দেশের লড়াই ঘিরে উত্তাপ নিভেনি একটুও। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের বিপক্ষে জয়হীন বাংলাদেশ। এবার ঘরের মাঠে দীর্ঘ অপেক্ষা ভাঙার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে আগামীকাল মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাত ৮টায় ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত। শিলংয়ে ভারতের বিপক্ষে প্রথম লেগে গোলশূন্য ড্র করা বাংলাদেশের সামনে তাই ঘরের মাঠে নিজেদের প্রমাণ করার বড় সুযোগ।
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে নিয়ম রক্ষার এই ম্যাচটি পরিণত করেছে মর্যাদার লড়াইয়ে। দুই দলই এটিকে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সম্মান রক্ষার লড়াই হিসেবে দেখছে। এই ম্যাচকে ঘিরে সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের যেন কমতি নেই। টিকিট ছাড়ার মাত্র ৬ মিনিটের মাথায় সাধারণ গ্যালারির সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
দুই দলের মুখোমুখি পরিসংখ্যান অবশ্য ভারতের পক্ষেই। ১৯৭৮ সাল থেকে মুখোমুখি ২৯ বারের দেখায় ১৩ জয় ভারতের, বিপরীতে ৩ বার জিতেছে বাংলাদেশ। আর বাকি ১৩ টি ম্যাচ ড্র হয়েছে।
১৯৯১ সালের কলম্বো সাফ গেমসের গ্রুপ পর্বেও ভারতকে ২-১ গোলে হারায় বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের সাউথ এশিয়ান গেমসে কাঠমান্ডুতে সেমিফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিদায় করে বাংলাদেশ।
এরপর ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। এসব স্মরণীয় সাফল্যের পর গত ২২ বছর ধরে আর ভারতের বিপক্ষে জয়ের দেখা মেলেনি বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের আক্রমণে বড় ভরসা হয়ে উঠেছেন ইংল্যান্ড প্রবাসী ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী। শিলংয়ের ভারতের বিপক্ষে প্রথম লেগের ম্যাচ দিয়েই বাংলাদেশের জার্সিতে তার অভিষেক হয়েছিল। এরপর দেশের হয়ে ছয় ম্যাচে চার গোল করেছেন। সর্বশেষ ঘরের মাঠে নেপালের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্রয়ের ম্যাচে হমজার পা থেকেই এসেছে বাংলাদেশের দুটি গোল। এই ম্যাচেও প্রবাসী এই ফুটবলারের দিকে বাড়তি নজর থাকবে সবার।
ম্যাচটি যেমন আবেগ ও প্রত্যাশার, তেমনি ভারতের বিপক্ষে জয়ের ক্ষুধাও দলকে আরও উজ্জীবিত করছে। বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার চোখে বর্তমান দলটিই সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী। আর তাই এবার ভারতকে হারানোর সুযোগ আছে বলেই মনে করেন।
ম্যাচের আগের দিন আজ সংবাদ সম্মেলনে জামাল বলেন, ‘আমরা যে অবস্থায় আছি এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী স্কোয়াড। তাই অবশ্যই আমাদের একটা বড় সুযোগ আছে। এটা অনেক আবেগের ম্যাচ, উত্তেজনার ম্যাচ। এই ম্যাচের পর জাতীয় দলের জন্য অনেক লম্বা বিরতি আছে। বছরটা যদি জয় দিয়ে শেষ করতে পারি, তা শুধু আমাদের জন্য নয়, সমর্থক ও আপনাদের জন্যও ইতিবাচক হবে।’
তবে দলের রক্ষণভাগ নিয়ে সন্তুষ্ট নন জামাল। তবুও ভারতের আক্রমণাত্মক খেলার ধরণকে নিজেদের জন্য সুযোগ হিসেবে দেখছেন তিনি। সেক্ষেত্রে আক্রমণে রাকিবের ওপরই ভরসা করছেন তিনি।
অন্যদিকে ভারতও ম্যাচটিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। বাংলাদেশের সময়ের সেরা স্কোয়াড আর গ্যালারিভর্তি বাংলাদেশের সমর্থকদের সামনে খেলাটাকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না ভারতের কোচ খালিদ জামিল। যদিও ম্যাচটি বাছাইয়ের নিয়মরক্ষার, তবে মর্যাদার লড়াই হিসেবে ভারতও মাঠে নামবে জয়ের উদ্দেশ্যে।
সংবাদ সম্মেলনে ভারতের কোচ জামিল বলেন, ‘চাপ আছে। আমাদের তা মানতে হবে। সবাই জানে এটি একটি চাপের ম্যাচ। তবে একটি ইতিবাচক ফলের আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এটা প্রীতি ম্যাচ নয়, এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের খেলা। আমরা ম্যাচটি জিততে চাই।’
তবুও ঘরের মাঠে দর্শকদের সমর্থন, দলের বর্তমান ফর্ম এবং সাম্প্রতিক কিছু ইতিবাচক পারফরম্যান্স বাংলাদেশের আশাবাদের জায়গা তৈরি করছে। তাই হামজা–জামালরা মিলে শেষ পর্যন্ত ২২ বছরের অপেক্ষার ইতি টানতেই মাঠে নামবে কাল।

স্পোর্টস ডেস্ক