ফ্রান্সে বন্ধ হচ্ছে পাবলিক ওয়াই-ফাই ও টর ব্রাউজার
খুব শিগগির হয়তো ফ্রান্সেও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ফরাসি সরকার। গত ১৩ নভেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় ১৩০ জন মানুষ প্রাণ হারান।
সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে এবং সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে ফ্রান্স সরকার চাইছে জরুরি অবস্থা জারি থাকার সময় পাবলিক ওয়াই-ফাই ও টর ব্রাউজারের ব্যবহার বন্ধ করতে। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফাঁস হওয়া কাগজপত্রে এ-সংক্রান্ত বিষয় উল্লেখ থাকার কথা জানিয়েছে ফরাসি পত্রিকা ‘লা মন্দ’। পত্রিকাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ-সংক্রান্ত আইন পাসের জন্য ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের সংসদে উত্থাপন করা হতে পারে।
ফাঁস হওয়া কাগজপত্রের বরাত দিয়ে ‘লা মন্দে’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাবলিক ওয়াই-ফাই বন্ধের কারণ এই সুবিধা ব্যবহার করলে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা ডিভাইসকে শনাক্ত করা মুশকিল হয়ে পড়ে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রায় ৩০০ স্থানে পাবলিক ওয়াই-ফাই সুবিধা রয়েছে।
এদিকে, মার্কিন ওয়েব ব্রাউজার টর ব্যবহার করে কেউ যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তাহলে সঠিক আইপি অ্যাড্রেস অনেক সময় শনাক্ত করা যায় না। ইউএস নেভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির তৈরি টরের ব্রাউজার ছাড়াও রয়েছে অ্যাপ্লিকেশন। তাই টর ব্রাউজারের মাধ্যমে কেউ কোনো ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করলে অনেক সময় তা শনাক্ত করতে হিমশিম খেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
এর আগে সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা এডওয়ার্ড স্নোডেন যে তথ্য ফাঁস করেছিলেন তাতে বলা হয়েছিল, বিভিন্ন সময়ে মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য টর ব্রাউজার ব্যবহার করেছে। এ ছাড়া সন্দেহ করা হয় যে, আইএস জঙ্গিরাও টর ব্রাউজার ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা ও সন্ত্রাসী আক্রমণের পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন করে থাকে।
এমনকি প্যারিস হামলার দায় স্বীকার করে অনলাইনে আইএসের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, সেটার উৎস বা আইপি অ্যাড্রেস শনাক্ত করা যায়নি। ফ্রান্সের গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, টর ব্রাউজার বা এ রকম কোনো ব্রাউজার দিয়েই ইন্টারনেট ব্যবহার করছে জঙ্গিরা এবং এ ধরনের প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে সামনে আরো হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।
তাই ফ্রান্স সরকার চাইছে, দেশটিতে টর ব্রাউজারের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে। তবে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। কারণ, এতে ফ্রান্সের জনগণের ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতার ওপরই হস্তক্ষেপ করা হবে, যা হয়তো সহজে মেনে নেবে না ফ্রান্সের জনগণ। বর্তমানে শুধু চীনেই টর ব্রাউজারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ফাহিম ইবনে সারওয়ার