অমর্ত্য সেনের বাড়ির জমি নিয়ে বিতর্ক, পশ্চিমবঙ্গে তোলপাড়
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতীচী’ সংলগ্ন জমির একাংশ বিশ্বভারতীর—এমন অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। যার ঢেউ আছড়ে পড়েছে রাজনীতির আঙিনাতেও। রাজনীতি থেকে বিভিন্ন মহলেও এই ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে, বর্তমানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই সরব নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। সেই কারণেই হয়তো তাঁর সম্পর্কে এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়েছে, অমর্ত্য সেনের শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র সীমানায় বিশ্বভারতীর জমিও ঢুকে গেছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, জমি মাপ দিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি লিজ় দেওয়া জমির মধ্যবর্তী বিশ্বভারতীর নিজস্ব কিছুটা জমিও ‘প্রতীচী’র সীমানার ভেতরে রয়েছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের আরো অভিযোগ, রজতকান্ত রায় যখন উপাচার্য ছিলেন, তখন অমর্ত্য সেনকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। কিন্তু, নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন তা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি। স্বাভাবিকভাবেই এ নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
এদিকে অমর্ত্য সেনের জমির একাংশ বিশ্বভারতীর, এমন অভিযোগ ওঠার পরই অমর্ত্য সেনকে চিঠি লিখে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘প্রতীচীর জমি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে, তা জানতে পেরে আমি বিস্মিত ও আহত।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘বিশ্বভারতীর নব্য হানাদারেরা আপনার পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন। আদর্শগতভাবে অমর্ত্য সেন বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে যা ইচ্ছে তাই বললে বাংলার মানুষ মেনে নেবে না।’ আগামী ২৯ ডিসেম্বর মমতা বোলপুরে সভা করার সময় এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাবেন বলেও জানান।
মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের চিঠিতে অমর্ত্য সেন খুশি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বিশ্বভারতীর তরফ থেকে এখনো কোনো চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে জমির মাপ সম্পর্কে অভিযোগ নিয়ে বলা যাবে। তবে বিষয়টি আইনজীবীকে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে।’
অমর্ত্য সেন বলেন, ‘১৯৪০ সালে বাড়িটি তৈরি করা হয়। তার ৮০ বছর পর কীভাবে এমন অভিযোগ উঠল, তা নিয়ে বিস্মিত হচ্ছি আমি।’
বিশ্বভারতী এভাবে হঠাৎ করে কেন ‘মিথ্যা’ বলা শুরু করল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
অমর্ত্য সেন বলেন, ‘আমার বাবা লিজ জমির ওপর বাড়ি তৈরি করেছিলেন। তারপর আশপাশের জমি কিনেছিলেন তিনি। তবে গোটা বিষয়টি আগে বিশ্বভারতী খোলাসা না করলে কিছু বোঝা যাবে না।’
বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম না করে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘উপাচার্য সঠিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। তার ওপর বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের ওপর প্রভাব বাড়াতে চাইছে।’
অমর্ত্য সেন জানিয়ে দেন, শান্তিনিকেতনে তাঁর জন্ম। পড়াশোনাও শান্তিনিকেতনে ও ঢাকায়। তাঁর চিন্তাভাবনায় রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল। তাই কোনো একটি সম্প্রদায়কে বেছে নিতে পারবেন না তিনি।
অমর্ত্য সেনের দাদু (মায়ের বাবা) সংস্কৃত পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য ছিলেন। আর, অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৪৫ সালে পরিবার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমান অমর্ত্য সেনের বাবা।