আজ আড়ম্বর ও ভাবগাম্ভীর্যে রানি এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যের চূড়ান্ত পর্বটি আজ সোমবার সম্পন্ন হবে। এটি শুধু যুক্তরাজ্যের জাতীয় শোক প্রকাশের উপলক্ষ নয়, বরং একই সঙ্গে হয়ে উঠছে সাম্প্রতিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক সমাবেশ।
যে রাজকীয়, ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ও আড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে রানির শেষবিদায় জানানোর আয়োজন করা হয়েছে, তাকে নজরকাড়া বললেও কম হবে। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের বিশালত্ব ও তার সুচারু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যুক্তরাজ্য কার্যত তার বিশেষ পরিচিতির বৈশিষ্ট্য বা ব্রিটিশ শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করছে।
রানির শেষকৃত্যের আয়োজনটিতে বিভিন্ন দেশের সম্রাট, বাদশাহ, রাজা-রানি, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের যেমন মহামিলন ঘটছে, তেমনই একে জাতীয় ঐক্যের স্বাক্ষর হিসেবে প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
গতকাল রাতে আমন্ত্রিত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা প্রথমবারের মতো একত্র হয়েছেন বাকিংহাম প্রাসাদে রাজা তৃতীয় চার্লসের আমন্ত্রণে এক সংবর্ধনায়। আর আজ মৃত্যুর দ্বাদশ দিনে তাঁরা অংশ নেবেন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানির জন্য আয়োজিত রাষ্ট্রীয় প্রার্থনায়।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে গির্জায় ধারণক্ষমতা দুই হাজার। তাই পাঁচ শতাধিক বিদেশি অতিথির বাইরে অন্যদের সেখানে প্রবেশাধিকার সীমিত থাকবে। তবে যেখানে রানির মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়েছিল সেই ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে নেওয়া এবং লন্ডন থেকে তাঁর নির্ধারিত সমাধিস্থল উইন্ডসর ক্যাসলে নেওয়ার পথে বিপুল জনসমাগম ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউরোপ ও আরব দেশগুলোর রাজা-বাদশাহ, জাপানের সম্রাট ও বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টসহ শতাধিক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা প্রয়োজন, তার ব্যবস্থা করতে লন্ডনে যেমন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয়েছে, তেমনই সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ ও চলাচলের সুযোগও বহাল রাখতে হয়েছে।
এই দুইয়ের সমন্বয় করতে গিয়ে বিদেশি অতিথিদের জন্য পরামর্শ ছিল বাণিজ্যিক যাত্রী বিমানে যাতায়াত করার এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মূল অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য সরকারিভাবে ঠিক করা বাস ব্যবহারের।
যাঁরা সাধারণ যাত্রী বিমানে না এসে বিশেষ বিমানে ভ্রমণ করেছেন, তাঁদের বিমান হিথরো, গ্যাটউইক কিংবা লুটনেও নামতে দেওয়া হয়নি। শুধু লন্ডনে স্ট্যান্সটেড বিমানবন্দরে সেগুলো অবতরণের ব্যবস্থা রাখা হয়।
বাড়তি নিরাপত্তার জন্য লন্ডনের কেন্দ্রে কিছুটা জায়গায় বাসসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হলেও লোকজনের যাতায়াত বন্ধ করা হয়নি। সাত থেকে দশ লাখ মানুষ ছয় থেকে আট ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করে রানির কফিনে শ্রদ্ধা জানাতে গেছেন।
তাঁদের সবাইকে বিমানবন্দরের মতো নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তাঁদের সবাই যে যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা তা–ও নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দূর থেকেও অনেকে এসেছেন। ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রতি বৈশ্বিক কৌতূহল বা আগ্রহের পুরোটাই যাতে আত্মস্থ করা সম্ভব হয়, সে জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি রাখা হয়নি।