ইউক্রেনের রাজধানী রক্ষার দায়িত্ব যাঁদের কাঁধে
ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘সেনা অভিযান’ শুরুর পর থেকে বিস্ফোরণ, হতাহত আর শহরছাড়ার খবর উঠে আসছে বিশ্ব গণমাধ্যমে। খবর বিবিসির।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রাশিয়াকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আর ইউক্রেনের জনগণকে মনোবল ধরে রাখার কথা বলা হলেও আসল কাজটা ইউক্রেনকেই করতে হচ্ছে। এর মধ্যে রাজধানী কিয়েভে বিস্ফোরণের পাশাপাশি দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে ভয়ংকর সংঘর্ষ। এ যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে কিয়েভকে রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন দুজন মানুষ। এর মধ্যে একজন সাবেক কৌতুক অভিনেতা এবং আরেকজন সাবেক বক্সিং চ্যাম্পিয়ন।
ভলোদিমির জেলেনস্কি টিভির পর্দায় প্রথম এসেছিলেন জনপ্রিয় এক কমেডি সিরিজের অভিনেতা হিসেবে। কিন্তু, তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায় ২০১৯ সালের এপ্রিলে। ৭৩ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে কৌতুক অভিনেতা থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।
ভলোদিমির জেলেনস্কি বর্তমানে চার কোটি ৪০ লাখ মানুষের দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। গত বৃহস্পতিবার তাঁর দেশে রাশিয়ার ‘সেনা অভিযান’ শুরুর পর একের পর এক ভিডিও বার্তায় নিজের বক্তব্য তুলে ধরছেন তিনি। কখনও রাশিয়াকে ঠেকাতে সাহায্যের জন্য বলছেন, কখনও সমঝোতার আহ্বান জানাচ্ছেন, আবার কখনও ইউক্রেনের সশস্ত্রবাহিনী ও মানুষের সাহসিকতার কথা তুলে ধরছেন।
এরই মধ্যে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রুশ সেনাদের এক নম্বর টার্গেট তিনি।’ তবু তিনি কিয়েভ ছেড়ে যাবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন।
অন্যদিকে, ২০১৪ সালে রাজধানী কিয়েভের মেয়র হিসেবে যখন ভিটালি ক্লিটসকো নির্বাচিত হন, তার আগে তিনি ছিলেন রাজনীতির ময়দানে নবীন একজন।
পারমাণবিক বিপর্যয়ের পরে চেরনোবিলে নিযুক্ত সেনা সদস্যের ছেলে ক্লিটসকো এবং ছোট ভাই ভ্লাদিমির বিশ্ব হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাম্পিয়ন। এখন এ দুই ভাই বলছেন, দেশবাসীর পাশাপাশি তাঁরাও অস্ত্রহাতে লড়াই করবেন।
টিভিতে দেওয়া এক বক্তব্যে ভিটালি ক্লিটসকো বলেন, ‘আমার আর কোনো বিকল্প নেই, আমাকে এটি করতেই হবে। আমি লড়াই করব।’
এদিকে, কিয়েভে দফায় দফায় চলছে সংঘর্ষ। সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে—কিয়েভে ময়দান স্কয়ারের কাছে আজ শনিবার একটি বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং শহরের ত্রয়েশ্চিনা এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন—কিয়েভে গোলাগুলির শব্দ শহরের কেন্দ্র থেকে কয়েক মাইল দূর থেকেও শোনা গেছে।
সংবাদমাধ্যম কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে—রাজধানীর চিড়িয়াখানার কাছে এবং শুলিয়াভকা এলাকার আশেপাশে ৫০টির বেশি বিস্ফোরণ এবং ভারী মেশিনগানের গুলির শব্দ শোনা গেছে।
এ ছাড়া ফক্স নিউজের প্রতিবেদক ট্রে ইংস্ট বলছেন, রাজধানী কিয়েভে ‘এখনই একাধিক দিক থেকে হামলা করা হয়েছে।
ইউক্রেনের স্টেট স্পেশাল সার্ভিস জানিয়েছে, রাজধানীর ত্রয়েশ্চিনা এলাকা একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে লড়াই চলছে। কিয়েভকে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন করার জন্য এ হামলা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া কিয়েভের পেরামোহি অ্যাভিনিউতে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ এবং আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
ইউক্রেনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ শহর ভাসিলকিভের একটি এয়ারফিল্ডের কাছে প্রচণ্ড লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। এ এয়ারফিল্ডকে রুশ প্যারাট্রুপাররা কিয়েভে হামলার জন্য অবতরণস্থল (স্প্রিংবোর্ড) হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলীয় শহর মাইকোলাইভ থেকে রুশদের বিতাড়িত করেছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।